আজকাল ওয়েবডেস্ক: কখনও এক প্যাকেট বিরিয়ানি, কখনও এক বোতল মদ, কখনও বা সামান্য কিছু টাকা। এসবের বিনিময়েই দিনের পর দিন চলত গরিব-অসহায় মানুষের শোষণ। শরীর থেকে নিয়ে নেওয়া হত যথেচ্ছ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু। আর নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে সেই শুক্রাণু বা ডিম্বাণু বিক্রি করা হত চড়া দামে। এমনই এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণাকাণ্ড সামনে এসেছে তেলেঙ্গানার সেকেন্দরাবাদে।
 
 
 হায়দরাবাদের জমজ শহর বলে পরিচিত সেকেন্দরাবাদ থেকে সম্প্রতি পুলিশ গ্রেফতার করেছে ‘ইন্ডিয়ান স্পার্ম টেক ক্রায়োসিস্টেম ক্লিনিক’-নামের একটি ফার্টিলিটি ক্লিনিকের মালিক-সহ সাত জনকে। অভিযোগ, এই ক্লিনিকের মালিক পঙ্কজ সোনির নেতৃত্বেই চলত এই চক্র। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, পঙ্কজ এই কাজে নিয়োগ করেছিলেন একাধিক ‘এজেন্ট’। এই এজেন্টদের কাজ ছিল রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে, দরিদ্র, অশিক্ষিত মানুষদের খুঁজে বের করা। এরপর তাঁদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুদাতা হিসেবে কাজে লাগানো হত।
 
 আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
 
 প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, দাতাদের মধ্যে যাঁরা অল্প হলেও লেখাপড়া জানেন, তাঁদের ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকা ‘পারিশ্রমিক’ দেওয়া হত। আর পড়াশোনা জানেন না এমন দিনমজুর বা ভবঘুরে পুরুষদের একবেলার বিরিয়ানি বা এক বোতল দেশি মদেই রাজি করানো হত স্পার্ম ডোনেশনে। শুধু পুরুষ নন, দরিদ্র নারীদেরও ব্যবহার করা হতো দাতা হিসাবে। কিছু ক্ষেত্রে মহিলা ভিক্ষুকদের ডিম্বাণু দেওয়ার জন্য ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
 
 আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
 
 বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পুরো ঘটনাই চূড়ান্ত অনৈতিক এবং আইন-বহির্ভূত। ভারতে স্পার্ম ও এগ ডোনেশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ম রয়েছে কেন্দ্রের। দাতা বা ডোনারের নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডও রয়েছে। ডোনারের বয়স, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রোগের ইতিহাস এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
 
 বহু নিঃসন্তান দম্পতিই এখন সন্তানলাভের আশায় আইভিএফ পদ্ধতির শরণাপন্ন হচ্ছেন। তাঁরা যাতে সুস্থ ডোনারের জিন পান তা নিশ্চিত করা ক্লিনিকের কাজ। এক্ষেত্রে তার উল্টোটাই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অপুষ্ট বা রোগাক্রান্ত ডোনারের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতের শিশুদের স্বাস্থ্য, জিনগত গুণাবলি বা মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
 
 
ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে চিকিৎসকমহলে। এতদিন এই চক্র কীভাবে সক্রিয় ছিল? উঠছে সেই প্রশ্নও। ক্লিনিকটি কীভাবে লাইসেন্স পেল? আরও কত ক্লিনিক এখনও গোপনে এই ধরনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে সেসব নিয়েও। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে আরও বেশ কিছু ক্লিনিক এবং এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নাম উঠে আসতে পারে। ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। দেশের সমস্ত আইভিএফ ক্লিনিকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
 
 সমাজবিদদের মতে, এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে, দারিদ্র্য আর অসহায়তাকে পুঁজি করে কতটা নির্মমভাবে ব্যবসা করা যায়। প্রশাসন কতটা কঠোর হাতে এই চক্র দমন করতে পারে, সেটাই এখন দেখার।
