শীতকাল এলেই গুড়ের রাজত্ব। নানা পদেই মিশে যায় এই উপাদান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর গুড় লিভারের কোষকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে এবং এর স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়ক। তবে প্রাকৃতিক হলেও সব কিছুর মতোই গুড় খাওয়ার ক্ষেত্রেও পরিমিতিবোধ জরুরি। ডা. আকাঙ্ক্ষা দীক্ষিত জানিয়েছেন, অতিরিক্ত গুড় খেলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। যাঁরা গুড় খাওয়ার পর অস্বস্তি অনুভব করেন, তাঁদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠছে, আসলে কতটা গুড় খাওয়া নিরাপদ?

খাবারের পর অল্প পরিমাণে গুড় খেলে একাধিক উপকার পাওয়া যায়। এটি হজমে সহায়তা করে, শরীরে শক্তি জোগায় এবং প্রয়োজনীয় কিছু পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। তবে কিছু মানুষকে গুড় খাওয়ার ক্ষেত্রে সংযত থাকতে হয়, এমনকি প্রয়োজনে এড়িয়ে চলাও দরকার।

খাওয়ার পর ছোট একটি টুকরো গুড় হজমশক্তি বাড়াতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং শক্তির মাত্রা বাড়ায়। গুড় হজমের এনজাইম সক্রিয় করে, ফলে পেট হালকা লাগে। স্বস্তি অনুভব হয়।

গুড় আয়রনে সমৃদ্ধ, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্তাল্পতার ঝুঁকি কমায়। তবে ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে গুড় খুব সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

ডা. আকাঙ্ক্ষা দীক্ষিতের মতে, খাবারের পর গুড় একটি চমৎকার শক্তির উৎস। এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে দ্রুত শক্তি জোগালেও ধীরে ধীরে শোষিত হয়। পাশাপাশি হজমের এনজাইম সক্রিয় করে গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও গুড় শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বার করে দিতে সহায়তা করে, যার ফলে লিভার সুস্থ থাকে এবং ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত হয়। গুড়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদান যেমন জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গুড় একটি প্রাকৃতিক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর খাদ্য হলেও তা অযথা বা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা ঠিক নয়। প্রত্যেকের শরীরের ধরন ও স্বাস্থ্যের অবস্থা আলাদা, তাই গুড় খাওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত সহনশীলতাকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিমাণে গুড় অন্তর্ভুক্ত করলে উপকার মিলতে পারে, কিন্তু কোনও অস্বস্তি বা সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে পরিমাণ কমানো কিংবা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। সচেতন ও পরিমিত অভ্যাসই গুড়ের আসল উপকারিতা উপভোগ করার চাবিকাঠি।