আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্যস্ত জীবনযাত্রায় শরীরকে সতেজ ও রোগমুক্ত রাখা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। মুঠো মুঠো সাপ্লিমেন্টের বদলে অনেকেই এখন ঝুঁকছেন প্রাকৃতিক উপাদানের দিকে। ফলেমূলের রসের মধ্যে আপেল বা কমলালেবুর কদর বেশি হলেও, পুষ্টিগুণে ও উপকারিতায় অনেককেই টেক্কা দিতে পারে আমাদের অতি পরিচিত বিটের রস। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রোজকার খাদ্যতালিকায় এক গ্লাস বিটের রস যোগ করলে মিলতে পারে অবিশ্বাস্য উপকার।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অব্যর্থ
বিটের রসের সবচেয়ে চর্চিত গুণ হল এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে দারুণ ভাবে সাহায্য করে। বিটে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এই নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীকে প্রসারিত করে, ফলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত বিটের রস খেতে পারেন।
আরও পড়ুন: পুরুষরা অন্তর্বাস কিনছেন? না একটিই দিনের পর দিন পরছেন? সেটাই বলে দিতে পারে অর্থনীতির অবস্থা! কীভাবে?

কর্মক্ষমতা ও সহনশীলতা বাড়াতে
ব্যায়াম বা কোনও রকম কায়িক পরিশ্রম করার আগে এক গ্লাস বিটের রস খেলে শরীরে শক্তি ও সহনশীলতা দুই-ই বাড়ে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এটি ফুসফুসে অক্সিজেনের ব্যবহারকে আরও কার্যকর করে তোলে। ফলে সহজে ক্লান্তি আসে না এবং খেলোয়াড়দের মতো যাঁদের প্রতিনিয়ত শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়, তাঁদের কর্মক্ষমতা বহুলাংশে বেড়ে যায়।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কিছু অংশে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়ে স্মৃতিশক্তি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার উপর। বিটের রস মস্তিষ্কে, বিশেষত ফ্রন্টাল লোবে (যা ভাবনাচিন্তা ও মনোযোগের সঙ্গে যুক্ত) রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বয়স্কদের মধ্যে স্মৃতিভ্রম বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি কমে।

লিভারকে সতেজ রাখে
আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল লিভার বা যকৃৎ। শরীর থেকে ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থ বার করে দেওয়াই এর প্রধান কাজ। বিটে রয়েছে বিটেইন নামক একটি উপাদান, যা লিভারকে ডিটক্স করতে বা তার কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি ফ্যাটি লিভারের সমস্যা প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের ভান্ডার
বিটের উজ্জ্বল লাল রঙের কারণ হল বিটালাইন্স নামক এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এটি শরীরের কোষকে ‘ফ্রি র‍্যাডিক্যালস’-এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ক্যানসারের মতো মারণ রোগের ঝুঁকিও কমে।
অন্যান্য পুষ্টিগুণ

এ ছাড়াও বিটের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট (যা কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে), ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি। অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার সমস্যা কমাতেও আয়রন সমৃদ্ধ বিটের রস অত্যন্ত উপকারী।

তবে উপকারিতা থাকলেও, কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাও প্রয়োজন। বিটের রস খাওয়ার পর প্রস্রাব বা মলের রং লালচে হতে পারে, যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি বিষয়। যাঁদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাঁদের বিট এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে অক্সালেটের মাত্রা বেশি থাকে। তা ছাড়া, এটি রক্তচাপ কমায় বলে, যাঁদের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তাঁদের এটি নিয়মিত না খাওয়াই ভাল।
সুতরাং, গুণের দিক থেকে বিটের রসকে আপনার রোজকার খাদ্যতালিকায় জায়গা দেওয়া যেতেই পারে। তবে কোনও রকম শারীরিক অসুস্থতা থাকলে বা নতুন করে কোনও ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।