আজকাল ব্যথা যেন জীবনের নিত্যসঙ্গী। কাজের চাপ, অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গি, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার বা ঘুমের অভাব-সব কিছুই শরীরে ব্যথার কারণ হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় দীর্ঘস্থায়ী বা অকারণে হওয়া ব্যথা হতে পারে ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। যদিও সব ব্যথাই যে ক্যানসারের লক্ষণ, তা নয়। তবে দীর্ঘস্থায়ী, অকারণ বা ক্রমশ বাড়তে থাকা ব্যথাকে কখনও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ ক্যানসার যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, চিকিৎসার সফলতা তত বেশি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের যে কোনও অংশে অকারণে ব্যথা শুরু হলে সেটি কখনওই উপেক্ষা করা উচিত নয়। অনেক সময় শরীর আমাদের বিপদের ইঙ্গিত দেয় ব্যথার মাধ্যমেই। বিশেষ করে এমন ব্যথা যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থায়ী হয়, ঘুমের সময় বা বিশ্রামে থেকেও না কমে কিংবা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাহলে সেটি হতে পারে গুরুতর রোগের, এমনকী ক্যানসারেরও ইঙ্গিত। যে জায়গার ব্যথা নিয়ে সবচেয়ে সতর্ক থাকতে হবে, তা হল-
১. পিঠের ব্যথা: বেশিরভাগ সময় এটি ভুল ভঙ্গি বা পেশির টান থেকে হয়। কিন্তু যদি নিচের বা মাঝের পিঠে হঠাৎ ব্যথা শুরু হয় এবং তা বিশ্রামেও না কমে, বিশেষ করে রাতে বেড়ে যায়, তবে সেই ব্যথা কিডনি, ফুসফুস বা মেরুদণ্ডের সমস্যা ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
২. পেটের ব্যথা: বদহজম, গ্যাস বা খাদ্যাভ্যাসের জন্য পেট ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি পেটের নিচের দিকে ক্রমাগত ব্যথা হয়, সঙ্গে ফোলাভাব হজমে সমস্যা, বা খিদে কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ থাকে, তাহলে এটি অন্ত্র, ডিম্বাশয় বা পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রাথমিক সঙ্কেত হতে পারে।
৩. হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা: সাধারণ আর্থ্রাইটিস বা আঘাতের কারণে হাড়ে ব্যথা হতে পারে। তবে যদি ব্যথার তীব্রতা বেশি থাকে, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং রাতে বেশি হয়, তাহলে তা হাড়ের ক্যানসার বা মেটাস্ট্যাটিক টিউমারের ইঙ্গিত হতে পারে।
৪. বুকে ব্যথা: অনেক সময় হৃদরোগ নয় বরং ফুসফুস বা স্তন ক্যানসারের কারণেও বুকের ভেতরে টান, ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়। যদি এই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, সঙ্গে কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকে, তাহলে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
৫. গলা বা মুখে ব্যথা: মুখ বা গলার ভেতরে ক্ষত, ফোলা বা ব্যথা যদি দুই সপ্তাহেরও বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে তা মুখগহ্বর বা গলার ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে ধূমপায়ী বা তামাক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
চিকিৎসকরা বলছেন, যদি শরীরের কোনও জায়গায় ব্যথা তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, বিশ্রামে বা সাধারণ ব্যথার ওষুধেও না কমে, ওজন কমে যায়, জ্বর বা ক্লান্তির সঙ্গে যুক্ত হয় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
