জয়ন্ত ঘোষাল:‌ মৌসুমী আর টুম্পা কয়ালকে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। সেই দু’টি চরিত্র আজই আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সামিল হলেন। বিজেপির এই দুই নারী চরিত্র এই কর্মসূচীতে যোগ দেওয়ার পরেও আমাদের বলতে হবে, এটি অরাজনৈতিক কর্মসূচী? গোটা কলকাতা শহরে মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছে– উই ওয়ান্ট জাস্টিস। আমরা ন্যায় চাই। নানা রকমের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অরাজনৈতিক কর্মসূচী বেরোচ্ছে। বলে দেওয়া হচ্ছে, কোনও দলীয় স্লোগান থাকবে না। 

 

 


তা বেশ। তবে বারবার মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন আলোড়ন তুলছে, খুবই নিন্দনীয় ধর্ষণ এবং হত্যা। কিন্তু ন্যায় দেবেন কে?‌ কার কাছ থেকে ন্যায় চাওয়া হচ্ছে? এই যে লালবাজারে গিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে তাঁরই ইস্তফা দাবি করা হল। তাহলে ন্যায় কি পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে চাওয়া হচ্ছে? তার কাছে যাওয়া হল কেন? যদি তাঁরই বিরুদ্ধে বক্তব্য হয়, তাহলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করে ফুল দিয়ে এই দাবি তোলার মধ্যে যতটা নাটক আছে, ঠিক ততটাই কি আন্তরিকতা আছে ন্যায়ের জন্য?

 

 


ধর্ষণ করে হত্যার মোট পরিসংখ্যান ১৫৫১টি। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশে কতজন? সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশে। সেখানে গ্যাংরেপ ২৮০, মধ্যপ্রদেশে ২০৭, অসমে ২০৫, মহারাষ্ট্রে ১৫৫। হায়! পশ্চিমবঙ্গ কোথায়? পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যানটা তো দেওয়া প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এই পরিসংখ্যান অনেক কম। বিজেপি সে কথাটা কিন্তু জানাতে ইচ্ছুক নয়। 
একটা পোস্টার লাগানো হয়েছে– আমার দিকে, আপনার দিকে। অভয়ার দৃষ্টি, সবার দিকে। বিচার পেতে আলোর পথে। আলো বন্ধুরা খুন ঘরে ঘরে। দীপ জ্বালান অন্ধকারে। বুধবার রাত ন’টা থেকে দশটা। এইসব কর্মসূচী পুরনো ঘরানার। এই কর্মসূচীগুলো স্বতঃস্ফূর্ত, না এর পেছনে একটা সংগঠিত শক্তি কাজ করছে? এখন কিন্তু এই প্রশ্নটাও উঠতে শুরু করেছে। প্রথমে যে স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল, এখন তার মধ্যে অনেক সচেতন প্রয়াস এবং স্বার্থ অনুপ্রবেশ হয়েছে। তবু বলছি, এই সমস্ত অনুষ্ঠান হোক। কিন্তু একটাই প্রশ্ন– ন্যায়টা দেবে কে?  

 

 


তদন্ত করছে সিবিআই। তাহলে ন্যায় চাইব কি সিবিআই–এর কাছ থেকে?‌ দিল্লির কাছ থেকে কি ন্যায় চাইব?‌ সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে কি ন্যায় চাইব?‌ কেন সিবিআই অফিসে ঘেরাও করার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচী নিয়ে দিল্লিতে চলে যাচ্ছেন না আন্দোলনকারীরা। কেন পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ন্যায় চাওয়া হচ্ছে?‌ এখানে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর এই মুহূর্তে আর কোনও ভূমিকাই নেই। তদন্ত করছে সিবিআই। 

 

 


সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকে নির্দেশ দিয়েছে যে, তারাই তদন্তের ব্যবস্থা করবে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কী ভূমিকা, সেটাও তো এখন জানাবে সিবিআই। কারণ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তার বক্তব্য জানিয়েছে। আর তার মধ্যে এত মিথ্যা, এত অসত্যপ্রচার! তারপরেও বলা হচ্ছে– উই ওয়ান্ট জাস্টিস। তা বেশ। খুব ভাল। উই ওয়ান্ট জাস্টিস– এটা না বললেই কি আমি নারী নারী–বিরোধী হয়ে যাব? আমি ধর্ষকদের পক্ষে চলে যাব? হায় ঈশ্বর! সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশ!