গোপাল সাহা: এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক বিরল ও জটিল চিকিৎসা হল। বিশেষজ্ঞ দলের প্রচেষ্টায় মাত্র ৮ মাসের এক শিশুর শ্বাসনালী থেকে খেলনার ক্ষুদ্র অংশ সফলভাবে বের করা হল। শিশুটি শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে ভর্তি হলে প্রাথমিক এক্স-রে ও পরবর্তী এইচআরসিটি থোরাক্স-এ দেখা যায়, বস্তুটি ডানদিকের মেইনস্টেম ব্রঙ্কাসে আটকে রয়েছে এবং ডানদিকের লোয়ার লোব সম্পূর্ণভাবে ধ্বসে গেছে।


রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে, জেনারেল অ্যানেস্থেশিয়ার অধীনে রিজিড ব্রঙ্কোস্কোপির মাধ্যমে বস্তুকে শনাক্ত ও অপসারণ করা হয়। সকলের মিলিত চেষ্টায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খেলনার ভাঙা বাল্ব-জাতীয় অংশটি বের করে আনা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল নির্বিঘ্ন, এবং শিশুটি অপারেশনের পর সম্পূর্ণ হেমোডাইনামিক্যালি স্থিতিশীল ছিল।


বিশেষজ্ঞ দলের গুরুত্ব
এই সফলতার পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিল ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি, ইএনটি, অ্যানেস্থেশিয়া ও রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়। শিশুদের শ্বাসনালীর এমন বিদেশী বস্তু আটকে যাওয়া চিকিৎসাবিজ্ঞানে জরুরি পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত হয়—যেখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত, যথাযথ ইমেজিং এবং অভিজ্ঞ হাতের ব্রঙ্কোস্কোপি জীবন রক্ষা করতে পারে।
এই কেসটি প্রমাণ করে যে মাল্টিডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ বা বহুমুখী বিশেষজ্ঞ দলের যৌথ হস্তক্ষেপ ছাড়া এমন জটিল শ্বাসনালীর সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।


এন.আর.এস. মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে এই চিকিৎসায় নেতৃত্ব দেন—
বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. সুমন্ত কুমার দত্ত ও তাঁর ইএনটি টিম
রেসপিরেটরি বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. জয়দীপ দেব ও রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ
ড. অনিন্দ্য মুখার্জী ও অ্যানেস্থেশিয়া টিম
এই সাফল্য আরও একবার প্রমাণ করল যে, হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি ইউনিট আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার মাধ্যমে জটিল শ্বাসনালীর সমস্যা মোকাবিলায় দেশের অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে।


এবিষয়ে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক মুস্তাফি আমাদের সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "মালদহ থেকে আট মাসের শিশুটিকে বাবা-মা নিয়ে এসেছিল কারণ, গত ১ ডিসেম্বর থেকে শিশুটির খুব কাশি হচ্ছিল তারই চিকিৎসা করাতে। তখন এক্সরে করাতে দেখা যায় শ্বাসনালীর মধ্যে কিছু একটি আটকে রয়েছে। এরপর আরও ভালো করে পরীক্ষা করাতে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়, এবং তারপর  অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়। শিশুটিকে তার বাবা-মা নিয়ে আসে গত ৬ ডিসেম্বর এবং সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় অস্ত্রপচার করে সেই খেলনার অংশ বার করা হয়। অস্ত্রোপচার শেষে দেখা যায় খেলনার মধ্যে থাকা টুনি লাইট ধারালো তার সহ  শ্বাসনালীতে চলে গেছে। এই মুহূর্তে শিশুটি সুস্থ আছে, বর্তমানে তাকে হাসপাতালে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আগামী তিন চার দিনের মধ্যে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।" 


চিকিৎসক মুস্তাফি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আরও বলেন, "অবশ্যই শিশুদের বাবা-মাদের উদ্দেশ্যে বলব, তারা যেন তাদের শিশুদের দিকে নজর রাখেন যে কোনও অবস্থাতেই কোনও খেলনা নিয়ে খেলতে গিয়ে যেন মুখে চলে না যায় কিংবা খেয়ে না ফেলে। এই বিষয় নজর রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটেও তাহলে তৎক্ষণাৎ যেন স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে তৎক্ষণাৎ নিয়ে যায় তার বাবা-মা। কারণ কোনওরকম খেলনা বা কোন আলপিন জাতীয় বস্তু যদি শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে তাহলে জীবন সংশয় পর্যন্ত হতে পারে, খুব অল্প সময়ে সেই শিশুটির প্রাণ চলে যেতে পারে। চিকিৎসা করার পর্যন্ত সুযোগ দেবে না  যদি শ্বাসনালিতে চলে যায়।"