আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকা বেহালা, সল্টলেক ও নিউটাউনে নির্বাচন কমিশনের পরিচালিত বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR)-এর প্রথম পর্বে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া নামগুলির একটি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য। কলকাতার একটি গবেষণা সংস্থা সাবর ইনস্টিটিউটের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রথম পর্বে বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে সর্বাধিক পদবি হল ‘দাস’ ও ‘সিংহ’।

দ্যা হিন্দুর একটি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, মোট বাদ পড়া নামের মধ্যে ‘দাস’ পদবিধারী ভোটারদের হার ১৬.৭৩ শতাংশ এবং ‘সিংহ’ পদবিধারীরা ১২.১১ শতাংশ। এর পরের স্থানে রয়েছে ‘শ’ (৭.৮২ শতাংশ), ‘রায়’ (৬.২৪ শতাংশ), ‘খাতুন’ (৫.০৩ শতাংশ), ‘যাদব’ (৪.৮৪ শতাংশ), ‘বেগম’ (৪.৮৪ শতাংশ), ‘রাম’ (৪.২৩ শতাংশ), ‘শর্মা’ (৪.০৭ শতাংশ), ‘মণ্ডল’ (৩.৯১ শতাংশ) ও ‘ঘোষ’ (৩.৮১ শতাংশ)। এই পদবিগুলির সামাজিক ও আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটারদের একটি বড় অংশই অ-বাঙালি পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত।

সাবর ইনস্টিটিউটের গবেষক আশিন চক্রবর্তী জানান, এই পদবিভিত্তিক বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে প্রথম পর্যায়ের SIR-এ পুরুষ ভোটারদের বাদ পড়ার হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তাঁর মতে, একক পুরুষ অভিবাসী শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষ, যাঁরা মূলত উত্তরপ্রদেশ, বিহারসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসে কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় বসবাস করেন, তাঁরাই এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন।

এই সমীক্ষায় কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার মোট ১৭টি বিধানসভা কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ভবানীপুর ও কলকাতা পোর্ট বিধানসভা কেন্দ্রও রয়েছে। ভবানীপুরে, যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধিত্বাধীন, সেখানে বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে ‘দাস’ পদবিধারীরা সর্বাধিক- ১৮.৮১ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে ‘সিংহ’ (১৩ শতাংশ), ‘যাদব’ (৭.৬৩ শতাংশ) ও ‘রায়’ (৭.৩৪ শতাংশ)।

অন্যদিকে কলকাতা পোর্ট বিধানসভা কেন্দ্রে সর্বাধিক বাদ পড়া ভোটারদের পদবি ‘সিংহ’- ১৩.২৭ শতাংশ। এই কেন্দ্রে ‘খাতুন’ পদবিধারী ভোটারদের বাদ পড়ার হার ৮.৪১ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে, সাবর ইনস্টিটিউটের আগের এক বিশ্লেষণে জানানো হয়েছিল যে পশ্চিমবঙ্গের যেসব বিধানসভা কেন্দ্রে মুসলিম জনসংখ্যার হার বেশি, সেখানে SIR-এর প্রথম পর্যায়ে আনম্যাপড বা বাদ পড়া ভোটারের হার তুলনামূলকভাবে কম।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের বিশেষ নিবিড় সংশোধনের পর ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় রাজ্যজুড়ে মোট ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার ৮৯৯ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের মোট ভোটার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭.০৮ কোটিতে। বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ পড়া এবং তার সামাজিক বৈশিষ্ট্য ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।