আজকাল ওয়েবডেস্ক: কিছু সময়ের ব্যবধান। আনন্দের পরিবেশ থেকে যেন যুদ্ধক্ষেত্র। শুক্রবার রাত থেকেই কলকাতাবাসী তৈরি হয়েছিল মেসি ম্যাজিকের জন্য। সেইমতো রাত জেগে কলকাতা বিমানবন্দরে যাওয়া। স্বপ্নের নায়ককে বরণ করে নেওয়া। সবই ঠিক ছিল।
তবে যুবভারতীতে এসে যে এভাবে তাল কাটবে সেকথা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। স্বপ্নের নায়ক যখন যুবভারতীয় সবুজ গালিচায় ঘুরছেন তখনও যেন সকলের মধ্যে এতটি ঘোর, আবেগ কাজ করছিল। সেখান থেকে অনেকে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। সেইছবি বারে বারে ধরা পড়েছে বিভিন্ন ছবি শিকারীদের ক্যামেরাতে। মেসি যেন তাদের কাছে একটা মোহ। হাতের কাছে তাকে পেয়ে সেই আবেগ হয়ে ওঠে বাধভাঙা।
এই ঘটনার পর তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেন, এই ঘটনায় যথেষ্ট ব্যথিত তিনি। যে বেসরকারি সংস্থা এই দায়িত্বে ছিল তারা নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। এই ধরণের একটি অনুষ্ঠান করার জন্য প্রশাসনও অনেক বেশি সক্রিয় থাকা উচিত ছিল। এমন ঘটনার আগে দরকার ছিল সঠিক ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা। ফুটবলের মক্কা বলে পরিচিত কলকাতা। সেই সুনাম নষ্ট হয়েছে।
মেসি যখন যুবভারতীর গালিচাতে ঘুরছেন তখন তিনি নিজেও হয়তো এই পরিস্থিতির আঁচ করতে পারেননি। অভিযোগ, তাকে ঘিরে এত মানুষের সমাহার ছিল যে সেখান থেকে মাঠে উপস্থিত দর্শকরা তাকে দেখতেই পাননি। ফলে যারা প্রচুর টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মাঠে এসেছিলেন তারা আর ধৈর্য্য রাখতে পারেনি।
এরপরই ঝড়ের গতিতে বদলে যেতে থাকে গোটা চিত্র। মাঠে সাধের নায়ককে সঠিকভাবে দেখতে না পেয়ে গ্যালারি থেকে উড়ে আসতে থাকে জলভর্তি বোতল। বেগতিক দেখে তখনি মেসিকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর যুবভারতী দেখল তাণ্ডব।
সুস্থ পরিস্থিতি খনিকের মধ্যে হয়ে ওঠে ব্যস্ত। মাঠে নেমে পড়েন ফুটবলপ্রেমীরা। ভাঙচুর করা হয় যুবভারতীর চেয়ার। মাঠের ভিতরে নেমেও দর্শকরা চারিদিকে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে। শুরুতে পুলিশ খানিকটা শান্ত থাকলেও পরে নামে ব়্যাফ। তারা খানিকের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
প্রসঙ্গত, লিওনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে যে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল তা খতিয়ে দেখতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। মেসি এবং ভক্তদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নিজের এক্স হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আজ সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে অব্যবস্থাপনা দেখা গিয়েছে, তাতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও হতবাক। যাঁরা তাঁদের প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসিকে এক ঝলক দেখার জন্য জড়ো হয়েছিলেন, সেই সকল হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমী ও ভক্তদের সঙ্গে অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছিলাম। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য আমি লিওনেল মেসি, সেইসাথে সকল ক্রীড়াপ্রেমী ও তাঁর ভক্তদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
