গোপাল সাহা: কৃষ্ণমূর্তি ফাউন্ডেশনের কলকাতায় আধ্যাত্মিক সম্মেলনে এসেছিলেন। আধ্যাত্মিকতা নিয়ে এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জাপানের বাসিন্দা নাম 'মিচি হিরো কাতা' (৭৫)। প্রায় এক মাসের মতো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পর অর্থনৈতিক কারণে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় চিকিৎসাধীন হন চলতি বছরের ২৫শে জুলাই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার গুরুতর রোগ অর্থাৎ পাকস্থলীতে ক্যান্সার থাবা বসিয়েছে বলে নির্ণয় করতে পারেন চিকিৎসকরা। সঙ্গেই চিকিৎসকরা জানান, পাকস্থলীতে ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মূলত ফুসফুস বেশি করে আক্রান্ত হয়েছে। চলছে কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা, তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সূত্রে খবর তাঁর পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির পথে এগোচ্ছে এবং সোমবার তাঁকে ভেন্টিলেশনে পাঠানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে যখন কৃষ্ণমূর্তি ফাউন্ডেশন জাপানি ব্যক্তির দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জাপান রাষ্ট্রদূতাবাসের কলকাতা কনস্যুলেটর হাউসকে জানালে তাদের প্রতিনিধি CUG হাসপাতালে মিচি হিরো কাতা' কে দেখতে আসেন এবং গত শুক্রবার (CUG) কনসুলেটর নিজে তাঁকে তাঁর আনা খাবার খাইয়ে পর্যন্ত দেন। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছেন, তিনি সেই খাবার সচ্ছন্দে গ্রহণ করেন এবং খান।
কিন্তু বলা বাহুল্য, জাপান (CUG) কনস্যুলেটর কর্তৃপক্ষও তাঁর দায়িত্ব নেন না। বদলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা অথবা অন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। জাপান কনস্যুলেটর কর্তৃপক্ষ আরও জানান, তাঁদের পক্ষে এই ব্যক্তির দায়িত্ব নেওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়, এমনটাই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর। মানবিক কারণেই 'মিচি হিরো কাতার' চিকিৎসা চালাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চেষ্টা চলছে তাঁকে সুস্থ করার।
আরও পড়ুন: কল্যাণের দায়িত্ব সামলাবেন কাকলি, লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের চিফ হুইপ তিনিই, বড় দায়িত্ব পেলেন শতাব্দীও
উল্লেখযোগ্য বিষয়টি সামনে এসেছে এসব টানাপোড়েনের মাঝেই। জানা গিয়েছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন জাপানি এই ব্যক্তি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ও চিকিৎসকদের ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে খুব কাতর ভাবে জানিয়েছেন, তিনি কলকাতাতেই থাকতে চান আমৃত্য, তাঁর শেষ কাজ যেন কলকাতাতেই হয়। কারণ, এই কলকাতা তাঁর কঠিন সময় পাশে থেকেছে। মূলত যখন জাপান রাষ্ট্রদূত বিভাগ তার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন তখনই তিনি আবেগঘন চিত্তে তাঁর শেষ ইচ্ছ জানিয়েছেন বলেই হাসপাতাল সূত্রে খবর। তবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে, চিকিৎসায় তারা কোনওরকম ত্রুটি রাখবেন না, নিজেদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে তাঁকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, শরীরে ক্যান্সার রোগ ফুসফুসে এবং অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে তাঁকে গতকাল সোমবার ৪ ঠা আগস্ট ভেন্টিলেশনে পাঠানো হয়েছে এবং পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসারত ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসকরা। বর্তমানে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে পূর্ণ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে, তাতে সুস্থতার আশা কতটা, তা বিচার সাপেক্ষ।
৩১ জুলাই প্রথম এই ব্যক্তির পরিস্থিতি প্রকাশ্যে আসে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, হাসপাতাল পক্ষ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, একদিকে ভাষাগত সমস্যা এবং অন্যদিকে তাঁর পরিবারের বা সহকারি কেউ না থাকায় বহুবিধ সমস্যায় পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
