আজকাল ওয়েবডেস্ক: অক্টোবরের শুরুতেই জানা গিয়েছিল অপারেশনের সিঁদুরের আঘাতের পর নিজেদের কৌশল পাল্টাতে চলেছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ(জেইএম)। মহিলাদের নিয়ে একটি শাখা সংগঠন তৈরি করছে তারা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জামাত-উল-মুমিনাত’। সেই সংগঠনের কার্যকলাপের নথি এল প্রকাশ্যে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, জঙ্গি দলটি তহবিল সংগ্রহ এবং জঙ্গি নিয়োগ করার জন্য ‘তুফাত আল-মুমিনাত’ নামে একটি অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কোর্সের অংশ হিসেবে জেইএম-এর প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহার এবং তাঁর কমান্ডারদের আত্মীয়স্বজন-সহ জইশ নেতাদের পরিবারের মহিলা সদস্যরা জিহাদ এবং ইসলামের প্রসঙ্গে তাঁদের ‘কর্তব্য’ সম্পর্কে অন্যদের শেখাবেন। অনলাইনে পরিচালিত এই নিয়োগ অভিযান ৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রের খবর, মাসুদের দুই বোন সাদিয়া আজহার এবং সামাইরা আজহারের নেতৃত্বে প্রতিদিন ৪০ মিনিটের একটি ‘বক্তৃতা’ দেওয়া হবে। যেখানে মহিলাদের ‘জামাত-উল-মুমিনাত’-এ যোগদানে উৎসাহিত করা হবে।

আরও পড়ুন: এইচ১বি ভিসা: কোন কোন ক্ষেত্রে দিতে হবে না ৮৮ লক্ষ টাকা চার্জ, তালিকা প্রকাশ করে জানাল ট্রাম্প প্রশাসন

সূত্রের খবর অনুযায়ী, মাসুদের ছোট বোন সাদিয়া আজহারকে জামাতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মে মাসে বাহাওয়ালপুরে জইশ সদর দপ্তরে অপারেশন সিঁদুরের সময় বিমান হামলায় মাসুদ আজহার পরিবারের বেশ কয়েকজন নিহত সদস্যের মধ্যে সাদিয়ার স্বামী ইউসুফ আজহার একজন ছিলেন। এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ভারতের সামরিক প্রতিশোধ ছিল এই বিমান হামলা। পহেলগাঁওয়ে হামলাকারীদের একজন ওমর ফারুকের স্ত্রী আফির ফারুককেও সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে, মাসুদ তাঁর ‘অনুদান’ জোগাড়ের অভিযান আরও জোরদার করছে। গত মাসে বাহাওয়ালপুরের মারকাজ উসমান ও আলিতে তাঁর শেষ জনসভার ভাষণের পর, জইশ এখন এই ‘কোর্সে’ ভর্তি হওয়া প্রতিটি মহিলার কাছ থেকে ৫০০ পাকিস্তানি রুপি (ভারতীয় মুদ্রায় ১৫৬ টাকা) আদায় করছে এবং তাঁদের একটি অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে বাধ্য করছে।

অনলাইনের করার কারণ, পাকিস্তানের উগ্রপন্থী সামাজিক রীতিনীতিগুলিকে এড়িয়ে চলা। যেখানে নারীদের একা বাইরে বের হওয়া অনুচিত বলে মনে করা হয়। সূত্রটি জানিয়েছে, ৫০০ পাকিস্তানি রুপি আদায়ের খবরটি ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের নিয়ম বাস্তবায়নের দাবিতে পাকিস্তানের ভণ্ডামিকে তুলে ধরে।

মাসুদ আজহার গত ৮ অক্টোবর জামাতের মহিলা ইউনিটের ঘোষণা করেন। ১৯ অক্টোবর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ‘দুখতারান-ই-ইসলাম’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যাতে নারীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়।

আরও পড়ুন: মোদিও নন, ট্রাম্পও নন, পাসপোর্ট ছাড়াই বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারেন মাত্র তিনজন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি

জানা গিয়েছে, জইশ-ই-মহম্মদের এই মহিলা সংগঠনটি মূলত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ অর্থাৎ প্রোপাগান্ডা ও স্থানীয় পর্যায়ের নিয়োগ কার্যক্রম চালাবে। বাহাওয়ালপুর, করাচি, মুজাফফরাবাদ, কোটলি, হারিপুর ও মানসেহরার বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রে অধ্যয়নরত দরিদ্র মুসলিম মহিলাদের সংগঠনের সদস্য করা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

মাসুদ আজহার ও তাঁর ভাই তালহা আল-সইফ যৌথভাবে মহিলাদের এই শাখা গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, আইএসআইএস, বোকো হারাম, হামাস এবং এলটিটিই-র মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ইতিহাসে মহিলা আত্মঘাতী যোদ্ধার ব্যবহার নতুন নয়। তবে জেইএম, লস্কর-ই-তইবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠনগুলো এতদিন পর্যন্ত মহিলাদের সশস্ত্র অভিযানে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করেছিল। তবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর জইশের এই নতুন পদক্ষেপ তাদের কার্যক্রমে এক বড় ধরনের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।