আজকাল ওয়েবডেস্ক: শতাধিক বছর ধরে তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো মাটি থেকে কার্বনের উৎস—ফসিল ফুয়েল—তুলে এনে ব্যবহার করেছে। কিন্তু এখন গবেষকরা ঠিক উল্টো পথে হাঁটছেন। কার্বনকে ফের মাটির তলায় পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই কার্বন ঢুকছে ঠিক সেই পুরনো কূপগুলিতেই যেগুলো একসময় এই কার্বনকে বের করে এনেছিল।


এখানে কোনও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা সায়েন্স ফিকশন পদ্ধতি নেই। বরং কৃষি ও বনাঞ্চলের বর্জ্য যেমন ভুট্টার খড় বা গাছের ডালপালা ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের ঘন তরল, যার নাম বায়ো-অয়েল।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে শত শত পুরনো তেল ও গ্যাস কূপ ফাঁকা পড়ে আছে। অনেকগুলো কূপ সঠিকভাবে সিল করা হয়নি, ফলে পরিবেশ ও জননিরাপত্তার জন্য সমস্যা তৈরি করেছে। একটি কূপ সঠিকভাবে বন্ধ করতে খরচ পড়ে প্রায় ১০ লাখ ডলার। একই সময়ে, দেশে বিপুল পরিমাণ কৃষি ও বনজ বর্জ্য নষ্ট হচ্ছে। মধ্যপশ্চিমে ভুট্টার খড় থেকে শুরু করে পশ্চিমে বনাঞ্চলের শুকনো ডালপালা পর্যন্ত। এখানেই গবেষকরা সুযোগ দেখলেন।

আরও পড়ুন: ফিক্সড ডিপোজিটের দিন শেষ, এখানে বিনিয়োগ করলেই ৮ শতাংশের বেশি সুদ পাবেন সিনিয়র সিটিজেনরা


গবেষণার মূল প্রক্রিয়ার নাম ফাস্ট পাইরোলাইসিস। এটি জটিল শোনালেও আসল ধারণা সহজ। শুকনো উদ্ভিজ্জ বর্জ্যকে অক্সিজেন ছাড়া ১,০০০°F-এরও বেশি তাপে গরম করা হয়। এর ফলে তা ভেঙে বায়ো-অয়েলে পরিণত হয়। গবেষক দল ২০০টি মোবাইল পাইরোলাইসিস ইউনিট কল্পনা করেছেন। এগুলো গ্রামীণ অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে কৃষি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করবে। প্রতিটি যন্ত্র প্রতিদিন প্রায় ১০ টন বায়োমাস প্রক্রিয়া করতে পারবে, আর উৎপন্ন বায়ো-অয়েল সংগ্রহ করে টার্মিনালে সংরক্ষণ করা হবে, পরে তা ফাঁকা কূপে পাঠানো হবে।


প্রতিটি ইউনিট তৈরি করতে খরচ পড়বে প্রায় ১৩ লাখ ডলার। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এই ব্যবস্থা প্রতি টন কার্বন আটকাতে প্রায় ১৫২ ডলার খরচ হবে যা অন্যান্য কার্বন ক্যাপচার পদ্ধতির সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক। কাঠজাত উপাদান ব্যবহার করলে খরচ আরও কমে ১০০ ডলার প্রতি টন পর্যন্ত নামতে পারে।


একটি কূপ পূর্ণ করতে লাগে প্রায় ২,১৬,০০০ গ্যালন তরল অর্থাৎ কার্বন আটকানোর প্রচুর জায়গা আছে। অনুমান করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮ লাখ এতিম কূপ রয়েছে, যা ২০২১ সালে পাশ হওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল ক্লিনআপ প্রকল্পের আওতায় ধরা ১.২ লাখ কূপের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
এই গবেষণা কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ নয়। সান ফ্রান্সিসকোর একটি স্টার্টআপ ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে এবং বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই কোম্পানিগুলো কার্বন রিমুভাল ক্রেডিট কিনতে চায়, আর বায়ো-অয়েল ইনজেকশন এখন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


এই পদ্ধতিটি আরেকটি পরিচিত প্রযুক্তি ডিরেক্ট এয়ার ক্যাপচার এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। ডিরেক্ট এয়ার ক্যাপচার বায়ু থেকে সরাসরি কার্বন শোষণ করে, কিন্তু সেটি অনেক বেশি ব্যয়বহুল। অন্যদিকে, বায়ো-অয়েল প্রক্রিয়ায় কৃষি-বর্জ্য ব্যবহার হয়, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে।


এই পদ্ধতি জলবায়ুকে সহায়তা করার পাশাপাশি কৃষক ও বন ব্যবস্থাপককেও নতুন আয়ের রাস্তা দিচ্ছে। কৃষকরা তাঁদের ফসলের খড় বিক্রি করতে পারবেন, বনাঞ্চলের শুকনো ডাল পরিষ্কার করে আয় করা যাবে। ছোট শহরগুলো বায়ো-অয়েল টার্মিনাল স্থাপন করে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। আইওয়া স্টেটের গবেষকরা দেখিয়েছেন, ভুট্টার খড় ব্যবহার করে বায়ো-অয়েল সংরক্ষণ শুধু টেকসই কার্বন আটকাতেই নয়, বরং কৃষি অবশিষ্টাংশের নতুন বাজার ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাড়তি মূল্য সংযোজন করতে পারে।