আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান, যিনি একিউ খান নামে পরিচিত ছিলেন, তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এই অভিযানের জন্য একটি দলও প্রস্তুত ছিল, যার নাম ছিল ‘কিডন’। হিব্রু ভাষায় যার অর্থ ‘বর্শা’। এই অভিযানের আওতায় মোসাদের বিশেষ ইউনিট ‘কিডন’ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে সফরের সময় কাদিরকে হত্যা করতে যাচ্ছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যে কোনও পারমাণবিক চুক্তি বন্ধ করা। ইজরায়েল সন্দেহ করেছিল যে পাকিস্তানি বিজ্ঞানীরা ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সহায়তা করছেন।
প্রাক্তন মোসাদ প্রধান শাবতাই শাবিত পরিকল্পনাটি খোলসা করেছেন
২০২৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে মোসাদের প্রাক্তন প্রধান শাবতাই শাবিত এই কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “যদি আমাদের কাছে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য থাকত, তাহলে আমি আমার কমান্ড্যান্টদের তাঁকে হত্যা করার নির্দেশ দিতাম। আমি বিশ্বাস করি যে এটি ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারত।” তবে, শাবিতের পরে মোসাদের প্রধান হয়ে ওঠা নতুন কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেন, যার অধীনে মোসাদ এজেন্টদের উচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ এবং মিশন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আর কত রাত একা কাটাবেন, মাত্র ৪৭০০ টাকায় মিলবে সঙ্গী, খুঁজে দেবে হোটেলই
পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী কাদিরকে হত্যার জন্য প্রস্তুত ছিল মোসাদ
প্রোপাবলিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার অধীনে, যখন কাদির খান দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে ভ্রমণ করতে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে হত্যা করার কথা ছিল। মোসাদের এজেন্টরা একিউ খানের উপর ক্রমাগত নজর রাখছিল। প্রাক্তন মোসাদ কর্মকর্তা প্রকাশ করেছেন যে কাদির অনেক দেশে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জন্য কৌশলগত পরামর্শ দেওয়া শুরু করেছিলেন, যা ইজরায়েল খুব গুরুত্ব সহকারে নজর রাখছিল। মোসাদ কর্মকর্তা বলেছেন, যে কোনও দেশে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করা গুরুতর, বিশেষ করে যারা ইজরায়েলের শত্রু তাদের জন্য। ইজরায়েল এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। জুন মাসেও, ইসরায়েল কমপক্ষে ২০ জন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছিল।

তবে মোসাদের এই মিশন কখনই সম্পন্ন হতে পারেনি, কারণ আমেরিকা মাঝখানে এসে পড়েছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশারফ মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি এ কিউ খানকে থামাবেন। মোশারফ আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি এ কিউ খানকে কোনও দেশকে পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনও তথ্য দিতে দেবেন না।
ইজরায়েল বিশ্বাস করতো যে একিউ খান ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু আমেরিকা মোসাদকে মিশনটি বন্ধ করতে বলেছিল। এই কারণেই মোসাদকে তাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক মিশনগুলির মধ্যে একটি স্থগিত করতে হয়েছিল। মোসাদের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে মিশনটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত মোসাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তার কারণে তা স্থগিত করা হয়েছিল।
