আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেশিরভাগ মানুষ যখন “হার্ট অ্যাটাক”-এর কথা শোনেন, তখন তাদের মনে চর্বি আর কোলেস্টেরলে ভরা ব্লক হওয়া ধমনীর ছবি ভেসে ওঠে। ছবিটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিকই, কিন্তু হয়তো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ পড়ে যায়। নতুন গবেষণা বলছে, মুখের সাধারণ কিছু ব্যাকটেরিয়া যেগুলো সাধারণত মুখেই থাকে, তারা রক্তপ্রবাহে ঢুকে হার্ট অ্যাটাকের সূচনা ঘটাতে পারে।


গবেষণায় দেখা গেছে, মুখের জীবাণুগুলো কেবল রক্তে ভেসে বেড়ায় আর অদৃশ্য হয়ে যায়। দীর্ঘদিন এমনটাই মনে করা হতো। কিন্তু আসলে তারা ধমনীতে জমে থাকা প্লাকে গিয়ে জায়গা করে নিতে পারে এবং এমন এক ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা দুর্বল অংশ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এই ফাটলই রক্ত জমাট বাঁধার সূচনা করতে পারে এবং হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে।

আরও পড়ুন: এবার ঘুরবে খেলা! বিশ্বের এই দুই শক্তিধর দেশের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী


সময়ের সঙ্গে ধমনীর ভেতরে প্লাক তৈরি হয়। এগুলো তৈরি হয় চর্বি, কোলেস্টেরল, প্রতিরোধক কোষ ও দাগের মতো টিস্যু দিয়ে। অনেক প্লাক কোনো সমস্যা ছাড়াই ধমনীর ভেতর বসে থাকে। ঝুঁকি বেড়ে যায় যখন বাইরের পাতলা আবরণ  যাকে ফাইব্রাস ক্যাপ বলা হয়  ভেঙে যায়। একবার সেই আবরণ ছিঁড়ে গেলে, প্লাকের উপাদান রক্তের সংস্পর্শে আসে; রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, আর তার ফলেই হতে পারে হার্ট অ্যাটাক।


গবেষকরা দুটি উৎস থেকে ধমনীর প্লাক বিশ্লেষণ করেছেন: হঠাৎ মৃত্যুবরণ করা মানুষ এবং যাদের গলায় ব্লক হওয়া ধমনী সার্জারির মাধ্যমে পরিষ্কার করা হচ্ছিল। তারা শুধু একটি পরীক্ষার উপর নির্ভর করেননি। ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক চিহ্ন খুঁজতে ডিএনএ প্রযুক্তি, টিস্যুর ভেতরে ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করতে বিশেষ স্টেইন এবং কোন কোন প্রতিরোধক পথ সক্রিয় ছিল তা দেখতে জিন কার্যকলাপ বিশ্লেষণ ব্যবহার করা হয়েছে।


তারা আরও পরীক্ষা করেছেন, কীভাবে ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন উপাদান ইমিউন কোষে সতর্ক সংকেত জাগায়। গবেষণার মূল নজর ছিল “প্যাটার্ন রিকগনিশন রিসেপ্টর”-এর উপর – যেগুলো দেহের “চোরের অ্যালার্ম” হিসেবে কাজ করে। বায়োফিল্ম হল ব্যাকটেরিয়ার একটি কমিউনিটি, যেখানে তারা একটি সুরক্ষামূলক স্তরের ভেতরে থাকে, কোনও পৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে এবং চাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করে। সে প্লাকগুলির ভেতরে ম্যাক্রোফেজ নামের ইমিউন কোষগুলো তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিল না। অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়াগুলো এমন জায়গায় ছিল, যেখানে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হচ্ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় প্লাকের প্রান্তে, যেখানে ফাটল ধরা বা অস্থিতিশীলতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। সেখানে ছড়ানো ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, যারা সম্ভবত লুকানো বায়োফিল্ম থেকে বেরিয়ে এসেছে।


গবেষণার প্রধান লেখক অধ্যাপক পেক্কা কারহুনেন ব্যাখ্যা করেন: “করোনারি ধমনীর রোগে ব্যাকটেরিয়ার সংশ্লিষ্টতা দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ করা হচ্ছিল, কিন্তু সরাসরি ও শক্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। আমাদের গবেষণায় বেশ কয়েকটি মুখগহ্বর ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক উপাদান ডিএনএ, ধমনীর প্লাকের ভেতরে পাওয়া গেছে।” ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়ার সংকেত করোনারি হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। যদিও এটি প্রমাণ করে না যে ব্যাকটেরিয়াই মৃত্যুর কারণ, তবে ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে যে তারা বিপজ্জনক শৃঙ্খলের একটি অংশ হতে পারে।


জনসংখ্যাভিত্তিক গবেষণায় অনেক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, মুখের স্বাস্থ্য আর হৃদস্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক আছে। প্রতিদিনের কাজ যেমন দাঁত ব্রাশ করা বা চিবানো। বিশেষত মাড়ি প্রদাহ হলে  মুখের ব্যাকটেরিয়া রক্তে ঢুকতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে হার্ট অ্যাটাক ঠেকানো যাবে, কিংবা ব্রাশ করলেই হৃদরোগ থেকে জাদুকরি সুরক্ষা মিলবে। কোলেস্টেরল স্তর, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, ডায়াবেটিস, পারিবারিক ইতিহাস। এগুলো এখনও বড় ঝুঁকির কারণ।