আজকাল ওয়েবডেস্ক: চলতি বছরের মার্চ মাসে ইতালির একদল বিজ্ঞানীর একটি দাবি ঘিরে বিশ্বজুড়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। তাঁদের বক্তব্য ছিল, মিশরের গিজার পিরামিডগুলোর নিচে লুকিয়ে আছে বিশালাকৃতির রহস্যময় কাঠামো। এই গোপন চেম্বার বা গহ্বরগুলো নাকি গিজা প্লেটোর প্রায় ৩,৫০০ ফুট নিচে অবস্থিত এবং একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। দাবি অনুযায়ী, এসব কাঠামো কেবল প্রাকৃতিক নয়, বরং মানুষের দ্বারা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ইতালির পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরাডো মালাঙ্গা এবং স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব স্ট্র্যাথক্লাইডের গবেষক ও রাডার ইঞ্জিনিয়ার ফিলিপো বিওন্ডি। তাঁরা বলেন, সোনার রাডারের মতো একটি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা পিরামিডের নিচে আটটি খাড়া, নলাকৃতি বা সিলিন্ডার-আকৃতির কাঠামোর অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন।
তবে এই দাবিকে শুরু থেকেই অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ভূতত্ত্ববিদ “কল্পকাহিনি” বলে উড়িয়ে দেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, পিরামিডের নিচে ছোট গুহা, প্রাকৃতিক চেম্বার বা ক্যাভার্ন থাকা অস্বাভাবিক নয় এবং এত গভীরে এই ধরনের প্রযুক্তি দিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়।
এবার সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন ফিলিপো বিওন্ডি নিজেই। সম্প্রতি তিনি ‘আমেরিকান অ্যালকেমি’ নামের একটি পডকাস্টে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে দাবি করেন, তাঁর গবেষণার পক্ষে আরও শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। চারটি স্বাধীন স্যাটেলাইট সংস্থা—আমব্রা, ক্যাপেলা স্পেস, আইসআইইওয়াই এবং ইতালির কসমো-স্কাইমেড গিজা অঞ্চলের নিচে স্ক্যান করে একই ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে তিনি জানান।
বিওন্ডির ভাষায়, “চারটি স্যাটেলাইটই একেবারে একই রকম ফলাফল দিয়েছে। এটা সত্যিই বিস্ময়কর। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মৌলিক প্রমাণ ছাড়া আমরা কোনও ঘোষণা করতে পারি না।” তাঁর দাবি, এই ‘র’ টোমোগ্রাফি ডেটাই প্রমাণ করে যে পিরামিডের নিচে বিশাল কাঠামো রয়েছে।
বিওন্ডি যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, তার নাম সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার ডপলার টোমোগ্রাফি। এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর পৃষ্ঠে সৃষ্ট অতি সূক্ষ্ম কম্পন বিশ্লেষণ করা হয়। সেই কম্পনের মধ্যেই নাকি হাজার হাজার ফুট নিচে থাকা বস্তুর এক ধরনের ‘অ্যাকুস্টিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ লুকিয়ে থাকে। পরে এই তথ্য ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করা সম্ভব হয়।
এই সম্ভাব্য আবিষ্কারটি হয়েছে খাফরে পিরামিডের নিচে, যা গিজার তিনটি মহাপিরামিডের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। দুই ইতালীয় বিজ্ঞানীর দাবি, সেখানে একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ রয়েছে, যার গায়ে নিখুঁত সর্পিল বা হেলিকাল কুণ্ডলী জড়ানো, এবং তা প্রায় ৩,৫০০ ফুট গভীরে গিয়ে শেষ হয়েছে। বিওন্ডির মতে, ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় এত নিখুঁত কুণ্ডলী তৈরি হওয়া অসম্ভব, তাই এটি মানুষের তৈরি হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
তবে সংশয় এখনও কাটেনি। বহু বিশেষজ্ঞের মত, এই ধরনের প্রযুক্তি এত গভীরে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারে না এবং পিরামিডের নিচে প্রাকৃতিক গঠন থাকাই স্বাভাবিক। ফলে গিজার পিরামিডের নিচে সত্যিই কোনও বিশাল মানবনির্মিত কাঠামো লুকিয়ে আছে কি না—এই প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর পেতে এখনও আরও গভীর ও স্বাধীন বৈজ্ঞানিক যাচাইয়ের অপেক্ষা রয়ে গেছে।
