আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে শনিবার বিকেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিকট ধোঁয়া দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, আর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে চলছে ব্যাপক জরুরি তৎপরতা।
দমকল বিভাগের মুখপাত্র তালহা বিন জাশিম জানান, শনিবার দুপুর প্রায় ২টা ৩০ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের কাছে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে আরও পনেরোটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে অতিরিক্ত বাহিনী ডাকা হয়, বর্তমানে মোট ৩৬টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জাসিম।
তিনি জানান, আগুনের ধোঁয়া ও তীব্র তাপের কারণে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আগুন যাতে কার্গো টার্মিনালের বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ফায়ার সার্ভিস সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট অপারেশন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “সব বিমান নিরাপদ আছে, যাত্রী টার্মিনাল ও রানওয়ে এলাকায় আগুনের কোনো ঝুঁকি নেই। ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়েছে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত।”
আরও পড়ুন: ধনতেরাসে দুর্দান্ত অফার, বাড়ি বসেই পাবেন সোনার সম্ভার, দেখে নিন অফারের ফুলঝুড়ি
বাংলাদেশ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবাহিনীর দুটি বিশেষ ইউনিট যৌথভাবে উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণ কাজ চালাচ্ছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, দুই প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও নৌবাহিনীর একটি টিমও এ অভিযানে অংশ নিয়েছে, যাতে বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এছাড়া বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে জরুরি চিকিৎসা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। আগুনের উৎস অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে, তবে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে শর্ট সার্কিট বা কোনও দাহ্য পদার্থ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে।
ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন লাগার পরই ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকাজুড়ে ধোঁয়া দেখা যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা অনেক দূর থেকেই ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছিলাম, একের পর এক ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে দেখি।”

এটি চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের তৃতীয় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এর আগে মঙ্গলবার ঢাকার আরমানিটোলায় একটি রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে একটি তৈরি পোশাক কারখানার ভবনে আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের শিল্প এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষকে বিমানবন্দর এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পরই ফ্লাইট চলাচল পুনরায় শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
