আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়, একেবারে বাস্তব। ডিজাস্টার মুভির কম্পিউটার গ্রাফিক্সের দৃশ্য যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠল ব্যাঙ্ককের রাজপথে। বুধবার শহরের একটি হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বিশাল অংশ জুড়ে হঠাৎই তৈরি হল এক বিরাট গর্ত। চোখের পলকে সেই গর্তে তলিয়ে গেল গাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি এবং জলের পাইপ। এই ভয়াবহ ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে, যা দেখে শিউরে উঠছেন সকলে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০ মিটার চওড়া এবং ৩০ মিটার দীর্ঘ ওই গর্তটি তৈরি হয় বুধবার। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, প্রথমে রাস্তার পিচ ধীরে ধীরে নীচের দিকে দেবে যাচ্ছে, এবং তার পরেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে। হতবাক প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই দৃশ্য নিজেদের ফোনে রেকর্ড করছেন। ঘটনায় তিনটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, আশ্চর্যজনকভাবে কেউ আহত হননি।
রেডিটে এই ঘটনার একটি ভিডিও পোস্ট হতেই মন্তব্যের ঝড় ওঠে। অনেকেই এত বড় বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এক জন লিখেছেন, “কীভাবে ওঁরা এত নিশ্চিন্ত হয়ে ওখানে দাঁড়িয়েছিলেন ,ওঁরা যে গর্তে তলিয়ে যাননি এটাই আশ্চর্য!” আর এক জনের মন্তব্য, “আমরা হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে নির্বোধ যুগে বাস করছি, একটা ভিডিও রেকর্ড করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি।” আর এক জন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আমার তো ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, ওঁরা দাঁড়িয়ে আছেন কী করে!”
ঘটনার পরেই ইঞ্জিনিয়ার এবং পুর আধিকারিকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ব্যাঙ্ককের গভর্নর চ্যাডচার্ট সিটিপান্ট।
প্রাথমিক তদন্তের পর তিনি জানান, কাছেই একটি মেট্রো স্টেশনের জন্য টানেল খোঁড়ার কাজ চলছিল। সম্ভবত সেই টানেলটিতে মাটি ধসে ঢুকে যায়, যার ফলে উপরের রাস্তার কাঠামো আলগা হয়ে ভেঙে পড়ে। এর ফলে একটি বড় জলের পাইপ ফেটে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়।
এই ঘটনার জেরে সংলগ্ন হাসপাতালটি আগামী দু’দিনের জন্য তাদের বাইরের অংশ বন্ধ রেখেছে। মূল হাসপাতাল ভবনটি সুরক্ষিত থাকলেও, সতর্কতা হিসেবে কাছের থানা এবং কয়েকটি বাড়ি ইতিমধ্যেই খালি করে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টানেলের ফাটল মেরামত এবং মাটির অবস্থা পর্যবেক্ষণের কাজ চলছে। এলাকার বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে বলে খবর।
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী আনুথিন চার্নভিরাকুলও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার জেরে তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা এবং টানেল মেরামত করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। তাঁর মন্ত্রিসভা এই কাজটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। আপাতত গোটা এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে এবং যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। এই ঘটনায় ব্যাঙ্কক জুড়ে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
