আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহাকাশ মানুষকে বিভিন্নভাবে বদল করে দেয়। সেখানে থাকে নানা ধরণের অবাক করা পরিবর্তন। তবে এই তালিকায় সবার থেকে উপরে রয়েছে ঝাপসা হয়ে যাওয়া দৃষ্টিশক্তি। সেখানে যারা মহাকাশে যান তাদের কাছে বিশেষভাবে তৈরি করা হেলমেট থাকে। সেখান থাকে বিশেষ পাওয়ার। সেই পাওয়ার দিয়ে তারা মহাকাশে স্পষ্টভাবে দেখতে পারেন।
তবে কেন মহাকাশে গিয়ে সকলের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। এবিষয়ে উত্তর দিতে গিয়ে গবেষকরা বলেছেন মহাকাশে যেহেতু কোনও ভর নেই তাই সেখানে মানুষের দেহে রক্ত চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়। এর সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়ে চোখের ওপর। ফলে সেখানে চোখের মধ্যে রক্ত চলাচল সঠিক থাকে না। সেখান থেকে দেখতে হলে মহাকাশচারীরার এই সমস্যার মধ্যে পড়েন।

২০১৫ থেকে শুরু করে ২০২০ পর্যন্ত মোট ৩০০ জন মহাকাশচারীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখান থেকে দেখা যায় চোখের মধ্যে যে ফ্লুয়িড থাকে সেটি সহজে মহাকাশে গিয়ে কাজ করতে পারে না। তাই কোনও ব্যক্তি যদি মহাকাশে গিয়ে হারিয়ে যান তাহলে তিনি গোটা মহাকাশকেই একেবারে ঝাপসা চোখে দেখবেন। চোখের রেটিনা সঠিক রক্তচাপ অনুভব করে না বলে সেখান থেকে তার কাজে অনেকটা সমস্যা তৈরি হয়।
গবেষকরা মনে করেন মহাকাশ থেকে ফেরার পরও এই সমস্যা বহুদিন ধরে মহাকাশচারীদের সঙ্গে থাকে। সেখানে তাদের কাছে এই সমস্যা একটি বিরাট বিষয় হয়ে থাকে। অন্য আরেকদল গবেষক মনে করেন মহাকাশে গিয়ে চোখের টিসুগুলি নরম হয়ে যায়। ফলে সেখান থেকে চোখের দৃষ্টিশক্তি অনেকটা ঝাপসা হয়ে যায়।

মহাকাশে মাসখানেক অবস্থানের পর মহাকাশচারীদের দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি গবেষণা করেছে নাসা। নাসার তথ্যমতে, দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকলে চোখের ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। মহাকাশচারীদের দৃষ্টিশক্তির এই পরিবর্তনকে স্পেস–অ্যাসোসিয়েটেড নিউরো-অকুলার সিনড্রোম বা এসএএনএস বলা হয়। শূন্য মাধ্যাকর্ষণে চোখের তারল্যের কিছুটা পরিবর্তন হয় বলে এই সমস্যা তৈরি হয়।

নাসা জানিয়েছে, মহাকাশচারীরা যখন দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকেন, তখন তাঁদের দৃষ্টিশক্তিতে সূক্ষ্ম পরিবর্তন দেখা যায়। এর ফলে অনেক নভোচারীর হঠাৎ করে উচ্চশক্তিসম্পন্ন চশমার প্রয়োজন হয়। মহাকাশচারীদের অপটিক ডিস্কে ফোলা ভাবের পাশাপাশি অক্ষিগোলকের আকৃতিরও পরিবর্তন হয়। এসব জটিলতার বড় কারণ হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অনুপস্থিতি। পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি মানুষের শরীরের তরলকে নিচের দিকে টেনে রাখে। কিন্তু শূন্য মাধ্যাকর্ষণের কারণে মহাকাশে রক্ত ও সেরিব্রোস্পাইনাল তরল মাথার দিকে সরে যেতে থাকে। এতে মাথার খুলিতে ও চোখের পেছনে চাপ বাড়ে। তখন সম্ভাব্য কাঠামোগত পরিবর্তন হয়।
আরও পড়ুন: নতুন কাজে ব্যস্ত শুভাংশু, রইল ভিডিও
দৃষ্টিশক্তিসংক্রান্ত এই সংকট মোকাবিলা করার জন্য নাসা বর্তমানে ‘থাই কাফ’ নামের একটি পরীক্ষা চালাচ্ছে। শূন্য মাধ্যাকর্ষণের সমস্যা সমাধানে বর্তমানে মহাকাশচারীরা মহাকাশে অবস্থানের সময় শরীরের নিচের অংশের রক্ত আটকে রাখার জন্য উরুর চারপাশে আঁটসাঁট ব্যান্ড পরে থাকেন। এই ব্যান্ড শরীরে ঊর্ধ্বমুখী তরলের স্থানান্তর রোধ করে থাকে। তাই মহাকাশচারীদের কাছে এই ধরণের সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। তবে ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিস্তিতি তৈরি না হয় সেজন্য চেষ্টা করছে নাসা।
