আজকাল ওয়েবজডেস্ক: ইসলামি শাসনে পরিচালিত ইরানে মহিলাদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু, ওই দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইর ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মেয়ের বিয়ে ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যা ঘিরেই তুঙ্গে চর্চা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কনে মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও স্ট্র্যাপলেস বিয়ের গাউন পরেছেন। তাঁর মাথাও খোলা। জানা গিয়েছে, ইরানের অন্যতম হিজাবপন্থী নেতা তথা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইর ঘনিষ্ঠ আলী শামখানির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল সেটি, কনে শামখানির মেয়ে। ভিডিওটি ২০২৪ সালের।

সমালোচকরা শাসকগোষ্ঠীর কঠোর হিজাব নির্দেশের বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ তুলেছেন। 

ভাইরাল ভিডিওটি ২০২৪ সালে আলী শামখানির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের। শামখানি ইরানের সবচেয়ে শীর্ষ প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একজন এবং আয়াতোল্লা আলি খামেনেই একজন বিশ্বস্ত। শামখানি নারী ও মেয়েদের উপর কঠোর ইসলামিক নিয়ম প্রয়োগের পক্ষে এবং বিক্ষোভকারীদের উপর সহিংস দমন-পীড়নের নির্দেশ দিয়েছেন একাধিকবার।

২০২২ সালে, ইরানে যখন দেশব্যাপী বিদ্রোহ শুরু হয়, তখন শামখানি ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। দেশটির হিজাব নিয়মের প্রতিবাদে তিতিবিরক্ত হয়ে মহিলারা রাস্তায় নেমে নিজেদের মাথার স্কার্ফ পুড়িয়েছিল।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া পুরনো ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে, ইরানের এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডমিরাল শামখানির মেয়ে তেহরানের বিলাসবহুল এস্পিনাস প্যালেস হোটেলের বিয়ের হলের করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। কনে ফাতেমা একটি ছোট, স্ট্র্যাপলেস পোশাক পরা অবস্থায় রয়েছেন। তাঁর মাথাতেও কোনও পোশাক নেই। মেয়ের পাশেই রয়েছেন শামখানি।

শামখানির স্ত্রীকেও একই রকমভাবে নীল রঙের লেসের সান্ধ্য গাউন পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। তিনিও হিজাব পরেননি। ভিডিওতে আরও বেশ কয়েকজন মহিলাকে হিজাব না পরা অবস্থায় ওই অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে।  

?ref_src=twsrc%5Etfw">October 19, 2025

ভিডিওটি নিয়ে সমালোচনা
সমালোচকরা খামেনির শাসনব্যবস্থাকে 'দ্বিমুখী' বলে কাঠগড়ায় তুলেছেন। ইরানের নির্বাসিত কর্মী মাসিহ আলিনেজাদ এক্স-এ লিখেছেন, 'ইসলামী প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ আইন প্রয়োগকারীদের একজন আলী শামখানির কন্যা, স্ট্র্যাপলেস পোশাক পরে একটি জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে করেছিলেন। এদিকে, ইরানে নারীদের চুল দেখানোর জন্য মারধর করা হয় এবং তরুণদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই।' তিনি উল্লেখ করেছেন যে ভিডিওটি লক্ষ লক্ষ ইরানীকে ক্ষুব্ধ করেছে কারণ খামেনি শাসনব্যবস্থা "নিজেদের ছাড়া সকলের উপর গুলি, লাঠি এবং জেল দিয়ে ইসলামী মূল্যবোধ প্রয়োগ করে।" 

মাসিহ আলিনেজাদের কথায়, "খামেনির প্রধান উপদেষ্টা প্রাসাদের মতো একটি স্থানে তাঁর মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। যে সরকার মাহসা আমিনিকে তাঁর চুল দেখানোর জন্য হত্যা করেছিল, গান গাওয়ার জন্য মহিলাদের জেলে পাঠিয়েছিল, যারা মেয়েদের ভ্যানে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৮০,০০০ মরাল পুলিশ নিয়োগ করেছিল, তারা নিজেদের জন্য একটি বিলাসবহুল পার্টির আয়োজন করে। এটি ভণ্ডামি নয়, এটিই সিস্টেম। তারা শালীনতা প্রচার করে, অথচ তাদের মেয়েরাই পশ্চিমী ধাঁচে  ডিজাইনার পোশাক পরে চলাফেরা করেন। নিয়মগুলি আপনার একরকম ও অন্যদের জন্য আলাদা তা হতে পারে না।' 

ইরানের সাংবাদিক আমির হোসেন মোসাল্লা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন যে,"শাসকই তাদের তৈরি আইনে বিশ্বাস করেন না, তাঁরা কেবল মানুষের জীবন দুর্বিষহ করতে চায়।"

সোমবার, ইরানের সংস্কারপন্থী-ঝোঁক পত্রিকা শার্গ, "কেলেঙ্কারির আড়ালে সমাহিত" শিরোনামে শামখানির একটি প্রথম পৃষ্ঠার ছবি প্রকাশ করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান বিদেশনীতির উপর আলোকপাতকারী ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা 'ডন'-এর ইরান বিশেষজ্ঞ ওমিদ মেমারিয়ান দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, "এটা বিশুদ্ধতম ভণ্ডামি।"

ইরানের নারী অধিকার কর্মী এলি ওমিদভারি বিক্ষোভে নিহত শত শত মানুষের কথা স্মরণ করেছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন নবদম্পতি। এমনকী বিপ্লবী গার্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত তাসনিম সংবাদ সংস্থাও শামখানির সমালোচনা করেছে।

শামখানির প্রতিক্রিয়া
শামখানি ২০২৪ সালের এপ্রিলের অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ফাঁস করার জন্য ইজরায়েলকে অভিযুক্ত করেছেন। ইরান ইন্টারন্যাশনাল তাঁকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে লিখেছে, "মানুষের গোপনীয়তা হ্যাক করা ইজরায়েলের হত্যার নতুন পদ্ধতি।" প্রতিবেদন অনুসারে, প্রাক্তন ইরানি মন্ত্রী এজ্জাতুল্লাহ জারঘামি শামকানির পক্ষে বলেছেন, তিনি মাথা নীচু করে রেখেছিলেন এবং অনুষ্ঠানটি 'শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য' ছিল। জারঘামি বলেন, "কিছু মহিলা হিজাব পরেছিলেন এবং বাকিরা তাঁর নিকটাত্মীয় ছিলেন।"