আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিভিন্ন ওয়াক্ফ বোর্ডের উদ্বেগের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন যে ‘ইউনিফাইড ওয়াক্ফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (উমীদ) পোর্টালে তথ্য আপলোড সংক্রান্ত সমস্যার ফলে যেসব সম্পত্তি নির্ধারিত সময়ে নথিভুক্ত করা যায়নি, তাদের ক্ষেত্রে আপাতত তিন মাস কোনও জরিমানা বা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তিনি আরও জানান, রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত অভিযোগগুলির নিষ্পত্তি রাজ্যগুলির ওয়াক্ফ ট্রাইবুনালই করবে এবং যাদের রেকর্ড আপলোড করা সম্ভব হয়নি, তারা ট্রাইবুনালের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারবেন।

উল্লেখ করা যায়, শুক্রবার রিজিজুর ঘোষণার আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বড় বড় ওয়াক্ফ বোর্ডগুলির অধিকাংশই সময়সীমার অনেক আগেই সম্পত্তির রেকর্ড আপলোডে ব্যর্থ হয়েছিল। দ্য ওয়্যার-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে নির্ধারিত শেষ তারিখ ৬ ডিসেম্বরের আগে খুব কম পরিমাণ সম্পত্তির তথ্য পোর্টালে আপলোড করা সম্ভব হয়েছে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পাঁচটি বড় রাজ্যের মধ্যে চারটিতে মোট ওয়াক্ফ সম্পত্তির মাত্র এক-দশমাংশ রেকর্ড করা সম্ভব হয়েছে। এসব পরিস্থিতির মধ্যে বিভিন্ন বোর্ড সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানায় এবং বেশ কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দলও এই দাবির প্রতি সমর্থন জানায়।

রিজিজু জানান, উমীদ পোর্টাল চালু করা হয়েছে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপিত ডিজিটাল ডেটাবেস তৈরির উদ্দেশ্যে, যাতে দেশের সব ওয়াক্ফ সম্পত্তির সঠিক তালিকা সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু পোর্টাল চালুর পর থেকেই প্রযুক্তিগত ত্রুটি, ধীরগতির সার্ভার এবং পুরনো জমির রেকর্ড ডেটাবেসে সংযুক্ত করতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেশের অনেক ওয়াক্ফ সম্পদ শতাব্দীপ্রাচীন এবং বিভিন্ন রাজ্যে জমির পরিমাপের পার্থক্য থাকায় সেই সংখ্যা একক মাপকাঠিতে রূপান্তর করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিজিজুর বক্তব্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মাত্র ১.৫১ লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তি পোর্টালে নিবন্ধিত হয়েছে এবং কর্ণাটক ও পাঞ্জাব তুলনামূলকভাবে ভালো কাজ করেছে। তবে কিছু বড় রাজ্য অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

মন্ত্রীর কথায়, যেসব মুতওয়াল্লি বা সম্পত্তির তদারককারীর নথিপত্র নেই, তাদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে ট্রাইবুনাল। তিনি বলেন, যদি কোনও সম্পত্তি সত্যিই ওয়াক্ফ সম্পত্তি হয়, তবে তার নথি থাকার কথা এবং সেগুলি যাচাই করার আইনগত ক্ষমতা ট্রাইবুনালেরই। রিজিজু পুনরায় স্পষ্ট করেন যে সংসদে পাস হওয়া সংশোধনী আইন পরিবর্তনের কোনও প্রশ্ন নেই এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সময়সীমা বাড়ানোর ক্ষমতা কেবল ট্রাইবুনালেরই হাতে।

যদিও কেন্দ্র দাবি করছে ডিজিটাল ডেটাবেস তৈরি হলে সম্পত্তিগুলি আরও স্বচ্ছভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে এবং অপব্যবহার কমবে, কিন্তু বহু ওয়াক্ফ বোর্ড এই প্রকল্পকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে। বর্তমানে দেশের আনুমানিক ৮.৮ লাখ ওয়াক্ফ সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি—প্রায় ১.৪ লাখ। পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে আনুমানিক ৮০,৪৮০টি সম্পত্তি, যা সংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এরপর রয়েছে পাঞ্জাব (৭৫,৫১১), তামিলনাড়ু (৬৬,০৯২) ও কর্ণাটক (৬৫,২৪২)। শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে সুন্নি ও শিয়া বোর্ড আলাদা ভাবে কাজ করে, বাকি রাজ্যগুলিতে একীভূত ওয়াক্ফ বোর্ড রয়েছে।

পরিস্থিতি যে চাপপূর্ণ এবং বৃহৎ পরিসরে অমীমাংসিত প্রযুক্তিগত জটিলতা রয়েছে তা স্পষ্ট, তবে কেন্দ্রের বক্তব্য—তিন মাসের ‘শিথিল সময়’-এ সমস্যা মিটিয়ে সম্পত্তির তথ্য আপলোড অব্যাহত রাখতে হবে, আর সমস্যার ক্ষেত্রে আইনি পথে সমাধান খুঁজতে হবে।