আজকাল ওয়েবডেস্ক: জন্মাষ্টমীতে দহি হান্ডি উৎসবে ঘোর বিপত্তি। মহারাষ্ট্রে একাধিক জায়গায় এই উৎসবের আবহে মৃত্যু হল দুইজনের। আহতের সংখ্যা একশো ছুঁইছুঁই। কেউ মানব পিরামিড তৈরির সময়েই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ পিরামিড থেকে নীচে পড়ে অচৈতন্য হয়ে যান। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বর্তমানে। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ১৪ বছরের গোবিন্দ নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ঘাটকুপার হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়ার পরেই চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাঁওদেবী গোবিন্দ পাঠকের রোহন মোহন মালভী টেম্পোতে বসেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে। আন্ধেরির আর্দশ নগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। সম্প্রতি জন্ডিসে আক্রান্ত ছিল সে। মানব পিরামিড তৈরিতে তাই অংশ নেয়নি। 

 

শনিবার দুপুরে ৩২ বছর বয়সি এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মানখুর্দে দহি হান্ডি উৎসবের জন্য প্রস্তুতির সময়েই উঁচু থেকে মাটিতে পড়ে যান তিনি।‌ মৃতের নাম, জগমোহন শিবকিরন চৌধুরী। মহারাষ্ট্র নগরে তিনি দহি হান্ডি উৎসবের জন্য হান্ডিটি দড়িতে ঝুলিয়ে উঁচুতে বাঁধার চেষ্টা করছিলেন। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি নীচে ধপ করে পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

 

আরও পড়ুন: আজ প্রবল বৃষ্টিতে ভাসবে ১৭ জেলা, ভারী বৃষ্টিতে টালমাটাল হতে পারে ৪ জেলা, তুমুল দুর্যোগের ঘনঘটা বাংলায়

 

শনিবার প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, গতকাল এই উৎসবের আবহে মোট ৯৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৭৬ জন প্রাথমিক চিকিৎসার পর ইতিমধ্যেই ছাড়া পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে। ১৯ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একাধিকের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

 

প্রতি বছর একাধিক রাজ্যে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দহি হান্ডি উৎসব পালিত হয়। জন্মাষ্টমীর দিন কৃষ্ণলীলা পাঠ, অষ্টোত্তর শতনাম জপ, কীর্তণের মতো অনুষ্ঠান পালিত হয় রাজ্যে রাজ্যে। তার মধ্যে অন্যতম হল দহি হান্ডি উত্‍সব। বিশেষত মহারাষ্ট্রে এটি সবচেয়ে বিখ্যাত উত্‍সব। দহি হান্ডি উৎসবে একদল যুবক একটি মানব পিরামিড তৈরি করে। একজনের কাঁধের উপর পা রেখে আরেকজন উপরে উঠে পড়েন। একেবারে উঁচুতে রাখা থাকে হান্ডি। সেই পাত্রে থাকে দই। সেই মানব পিরামিডের উপরে উঠে মাটির পাত্রের ঝুলন্ত দই ভর্তি ভাঙার চেষ্টা করেন একজন।‌ তারপর সেই দিন মাটিতে পড়ার আগেই চেখে দেখেন অনেকে। 

 

পুরাণ মতে, শ্রী কৃষ্ণ শৈশবে মাখন ও দধি চুরি করে খেতে ভালবাসত। এই দুই লোভনীয় খাবার ছিল কৃষ্ণের অতি প্রিয়। দুপুরবেলায় চুপিচুপি ঘরে ঢুকে মাখন ও দধি চুরি করে খেত। কখনও কখনও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়েও মাখন ও দধি চুরি করতে যেত।‌ ঘরে ঢুকে মানব পিরামিড তৈরি করত তারা। আর সবার উপরে উঠে পড়তে ছোট্ট কৃষ্ণ। মাখন ও দধির হাঁড়ি ভেঙে, তারপর সবাই ভাগ করে খেত। 

 

এ যুগে কৃষ্ণের সেই লীলা দেখেই দহি হান্ডি উৎসব শুরু হয়েছে। মহারাষ্ট্রে প্রতি বছর এটি ধুমধাম করে পালিত হয়। দলবদ্ধ হয়ে স্থানীয় যুবকরা এতে অংশ নেন। বিশাল মানব পিরামিডটি গড়ে ওঠার দৃশ্যটিও বেশ আর্কষণীয়। যা দেখতে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ।