আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় দুই দলিত ব্যক্তিকে গরু পাচারের অভিযোগে অর্ধনগ্ন করে লাঞ্ছিনা করা হয়েছে। তাঁদের হাঁটু গেড়ে হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করা হয়েছে, এছাড়াও ঘাস খেতে এবং নর্দমার জল পান করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

রবিবার ধারাকোট থানা সীমানার অন্তর্গত খারিগুম্মা গ্রামের জাহাদাতে এই ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তারপরই  রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পিটিআই ভিডিওটির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

?ref_src=twsrc%5Etfw">June 23, 2025

পুলিশের দাবি, সিঙ্গিপুরের বাবুলা নায়ক (৫৪) এবং বুলু নায়ক (৪২) হরিউর থেকে তাঁদের গ্রামে একটি অটোতে দু'টি গরু এবং একটি বাছুর নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে খারিগুম্মায় স্বঘোষিত 'গো-রক্ষক'দের একটি দল তাঁদের ধরেন। বাবুলা ও বুলুর বিরুদ্ধে গরু পাচারের অভিযোগ আনেন গো-রক্ষকরা। 

গো-রক্ষরকা বাবুলা ও বুলুরের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। পুলিশ আরও জানিয়েছে যে, ভুক্তভোগীরা গো-রক্ষরদের দাবি মানতে অস্বীকার করলে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিনা করা হয়। সঙ্গে অবমাননাকর আচরণও করা হয়। 

একজন পুলিশ আধিকারিক বলেন, "বাবুলা ও বুলুকে একটি সেলুনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদের মাথা অর্ধেকটা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। তারপর তাঁদের এক কিলোমিটারেরও বেশি গামাগুড়ি দিতে বাধ্য করা হয়, ঘাস খাওয়ানো হয় এবং নর্দমার জল পান করানো হয়।" 

গোরক্ষকদের হাত থেকে পালাতে পারার পর, ভুক্তভোগীরা রবিবার সন্ধ্যায় ধারাকোট থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন।
ভুক্তভোগীদের মতে, গরুগুলি বাবুলার মেয়ের বিয়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী উপহার হিসেবে আনা হয়েছিল।

দু'জনকে লাঞ্ছিনা করা এবং অর্ধেক মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। গঞ্জামের এসপি শুভেন্দু কুমার পাত্র জানিয়েছেন যে, মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পুলিশ এই ঘটনায় কমপক্ষে ছয়জনকে আটক করেছে। তিনি বলেন, "মামলায় জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য খোঁজ চলছে।" 

বাবুলা নায়ক এবং বুলু নায়ক ধারাকোট কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে, আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্য পশু রক্ষা নয় বরং চাঁদাবাজি করা। 

পুলিশ কর্তৃপক্ষ গরু নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য যাচাই করছে। যদিও ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন যে- বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সেগুলিকে নিয়ে য়াওয়া হচ্ছিল।  

গঞ্জাম জেলা দলিত মহাসংঘের আহ্বায়ক সংগ্রাম নায়ক বলেছেন: "আমরা এই নৃশংস জাপাত ভিত্তিক হিংসার নিন্দা জানাই। ন্যায়বিচার এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রাজ্যব্যাপী আন্দোলন শুরু করা হবে।" রাজ্যের প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান নিরঞ্জন পট্টনায়ক বলেন, "এটি লিখতেও আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। গঞ্জাম জেলার দুই তরুণ দলিত পুরুষকে অপমানিত ও নির্যাতন করা হয়েছিল - মাথা অর্ধেক কামানো, ২ কিমি হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করা, ঘাস খেতে এবং নর্দমার জল পান করতে বাধ্য করা। আর কিসের জন্য? কেবল তাদের মেয়ের বিয়ের জন্য একটি গরু কেনার জন্য। জাতিগত হিংসা বাড়ছে। ওড়িশায়, ন্যায়বিচার অনের দূরের বস্তু বা প্রায় অদৃশ্য বলে মনে হচ্ছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কেন নীরব?"