আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক লহমায় কোটিপতি হওয়ার সহজ পথ খুঁজতে গিয়েই সাক্ষাৎ যমদূতের হাতে পড়লেন তিন ব্যক্তি। পাঁচ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে তার বদলে পঞ্চাশ গুণ লাভের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু সেই স্বপ্নই পরিণতি পেল ভয়াবহ এক মৃত্যুতে। ছত্তিশগড়ের কোরবা জেলার ঘটনা৷ জানা গিয়েছে, বুধবার গভীর রাতে ‘কালা জাদু’ করাকালীন রহস্যজনক মৃত্যু হল ওই তিনজনের।

স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী মহম্মদ আশরাফ মেমন, সুরেশ সাহু এবং নীতীশ কুমারের নিথর দেহ উদ্ধার হয়েছে বারবাসপুরের একটি স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডের ভেতরের ঘর থেকে। তিনজনেরই বয়স ৪০ থেকে ৪৫-এর মধ্যে। ঘটনাটি উর্গা থানা এলাকার। এই ঘটনায় তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে সিভিল লাইন পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বিলাসবুরের রাজেন্দ্র কুমার নামে এক তান্ত্রিক দাবি করেছিলেন, তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে তিনি নাকি পাঁচ লক্ষ টাকাকে প্রায় আড়াই কোটি টাকায় পরিণত করতে পারেন। এই অলৌকিক টোপেই রাজেন্দ্রর সঙ্গে যোগ দেন ওই তিন ব্যক্তি।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় রাজেন্দ্র তাঁর তিন সঙ্গীকে নিয়ে কোরবাতে আসেন। পুলিশ ইতিমধ্যেই সেই তান্ত্রিক-সহ চার-পাঁচজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। রাত ১১টা নাগাদ আশরাফ মেমনের ফার্মহাউসের ভেতরে শুরু হয় সেই আচার। তদন্তকারীদের বক্তব্য, তান্ত্রিক একে একে তিনজনকে আলাদা একটি ঘরে নিয়ে যান। তাঁদের হাতে লেবু ধরিয়ে, মেঝেতে দড়ি দিয়ে গোল বৃত্ত এঁকে, ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেন। তান্ত্রিক জানান, আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই দরজা খোলা হবে।

কিন্তু যখন দরজা খোলা হলো, তখন দেখা গেল তিন ব্যক্তিই ঘরের ভেতরে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুজোয় ব্যবহৃত জিনিসপত্র, লেবু, দড়ি এবং নগদ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। যা দেখে অনুমান করা হচ্ছে, কালা জাদুর আচার চলাকালীনই এই বিপত্তি ঘটেছে। কোরবার পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ তিওয়ারি বলেছেন," প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে তাঁদের শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মৃতদের শরীরে আঘাত ও আঁচড়ের চিহ্নও লক্ষ্য করেছেন পরিবারের সদস্যরা। "

তবে, কোরবার সিএসপি ভূষণ এক্কা দেহগুলি পরীক্ষা করার পর জানান, "লক্ষণগুলি বিষক্রিয়ার দিকেও ইঙ্গিত করছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে তবেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।" এদিকে আটক হওয়া সন্দেহভাজনদের জেরা করা হচ্ছে। তাঁরা খুন হয়েছেন, না কি বিষক্রিয়ার শিকার, সেই রহস্যের জট খুলতে বিশদ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

 উল্লেখ্য, ছত্তিশগড়ে 'ডাইনি প্রথা' প্রতিরোধের আইন থাকলেও কুসংস্কার-জনিত অপরাধের সংখ্যা এখনও কমেনি। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ৫৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার সঙ্গে কুসংস্কারের যোগ ছিল। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ২০০-র বেশি কুসংস্কার-জনিত হিংসার ঘটনা ঘটে।