আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি দিল্লিতে এক ভয়াবহ হত্যার ঘটনা সামনে এসছে। নির্মম খুনের অভিযোগ উঠে আসে এক যুবতীর বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ২৯ বছর বয়সী এক যুবতী তাঁর স্বামীকে খুন করেছেন৷ ৩২ বছর বয়সী যুবককে প্রথমে খুন করেন এই যুবতী, উপরন্তু এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত যুবতীকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় দিল্লির নিহাল বিহার এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। ঘটনা জানাজানি হতে হুলুস্থুল। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, অভিযুক্ত যুবতী ফারজানা খান৷ তিনি তাঁর স্বামীকে হত্যা করেন। এরপর চতুরতার সঙ্গে তা আত্মহত্যা বলে চালান। পরবর্তীতে পুলিশ ফারজানা খান নামে অভিযুক্তের ফোন বাজেয়াপ্ত করে। ফোন সার্চ হিস্ট্রি দেখার পর হাতেনাতে ধরা পড়েন যুবতী। পুলিশ জানিয়েছে হিস্ট্রিতে 'একজন ব্যক্তিকে হত্যা করার উপায়' এবং 'চ্যাট হিস্ট্রি কীভাবে মুছে ফেলা যায়' তাও উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করায় উঠে আসে ভয়ানক কিছু সত্যি।  ফারজানা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে তিনি তাঁর বিবাহিত জীবনে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ছিলেন। এমনকি তিনি দাবি করেছেন যে তাঁর স্বামী মোহাম্মদ শহীদ ওরফে ইরফান তাঁকে যৌন তৃপ্তি দিতে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছেন। একইসঙ্গে ফারজানা জানান, তাঁর স্বামী অনলাইনে জুয়া খেলতেন। এর জেরে তিনি প্রচুর ঋণ নিয়েছেন। যুবতী স্বীকার করেছেন যে ইরফানের তুতো ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর একটি সম্পর্ক তৈরী হয়। জানা গিয়েছে সেই ভাই উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে থাকেন। 'যৌন তৃপ্তির' জন্য তাঁর এই সম্পর্ক বলে জানিয়েছেন ফারজানা। পুলিশ জানিয়েছে, এই ব্যক্তিগত এবং আর্থিক বিষয়গুলি তাঁকে স্বামীর হত্যার মত চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছিল। দেওর আর বউদি প্রায়শই একে অপরের সঙ্গে কথা বলত। এটি হত্যায় ইরফানের ভাইয়ের সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে। পুলিশ এখন ফারজানার কল ইতিহাস এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট পরীক্ষা করে দেখছে যে ফারজানার দেওরও এই হত্যাকান্ডে জড়িত কিনা।

সূত্রে জানা গিয়েছে রবিবার সন্ধ্যায় ইরফানের ভাই তাকে সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ফারজানা প্রথমে দাবি করেছিলেন যে জুয়া খেলায় হেরে যাওয়ার মানসিক চাপের কারণে ইরফান আত্মহত্যা করেছেন।

আরও পড়ুনঃ 'হৃদয় দাও,কিন্তু ওটিপি নয়'! জালিয়াতি রুখতে উত্তর প্রদেশ পুলিশের অভিনব বার্তা, ভিডিও ভাইরালে উত্তাল নেটপাড়া

পুলিশ ইরফানের শরীরে তিনটি ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ করে। এরপর তদন্ত শুরু করতেই সত্য সামনে আসে। 'ইরফানের স্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন যে আর্থিক চাপের কারণে ইরফান নিজেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছেন। তবে এই আঘাত মারাত্মক ছিল। তাই আমাদের সন্দেহ হয় এটি আত্মহত্যা হতে পারে না ' একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন।

জানা গিয়েছে মৃতদেহ সোমবার ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান হয়। এরপর নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে আঘাতগুলি আত্মহত্যার নয়। সম্পূর্ণ অসঙ্গতি বয়ানে। এরপর পুলিশ ফারজানার ফোন পরীক্ষা করে। 'আমরা ইন্টারনেটে ঘুমের ওষুধ (সালফা) ব্যবহার করে কাউকে কীভাবে হত্যা করা যায় এবং কীভাবে চ্যাট মুছে ফেলা যায় সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে দেখেছি,' অফিসার বলেন। 'এতে স্পষ্টতই খুনের প্রমাণ মেলে' আরও বলেন তিনি। 

প্রমাণের মুখোমুখি হলে, ফারজানা ভেঙে পড়েন। স্বামী ইরফানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। তিনি স্বীকার করেন যে তিনি বিবাহে অসন্তুষ্ট ছিলেন। এমনকি তাঁর স্বামীর ক্রমাগত ঋণ নিয়ে হতাশায় ছিলেন।

ফারজানা বেরেলির বাসিন্দা। ২০২২ সালের নভেম্বরে তাঁর থেকে সাত বছরের বড় মোহাম্মদ শহীদ ওরফে ইরফানকে বিয়ে করেন। পেশায় ওয়েল্ডার ইরফান দিল্লির নিহাল বিহারের আরজেডএইচ-ব্লকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। বিয়ের পর ফারজানা দিল্লিতে চলে আসেন। তবে তিনি এখানে শুরু থেকেই থাকতে অপছন্দ করতেন।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ফারজানা আরও জানান যে বিয়ের পর তিনি একবার গর্ভবতী হয়েছিলেন। সেই সময় স্বামীকে না জানিয়েই গর্ভপাত করান যুবতী। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, ইরফানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে অসন্তুষ্ট থাকার এই দাবি সম্পূর্ণ সত্য নাও হতে পারে।

 বর্তমানে পুলিশ তাঁর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এবং অপরাধের পিছনের উদ্দেশ্য সহ সকল দিক তদন্ত করছে। একটি দল বরেলিতেও যাবে তুতো ভাইকে জেরা করতে। পুরো ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে৷