আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলেজে যেতেই ভয় পেতেন তরুণী। গেলেই অধ্যাপকের হুমকি। নম্বর কমানোর নয়। একেবারে ফেল করিয়ে দেওয়ার। কারণ? অধ্যাপকের দাবি, তাঁর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত না হলেও চরম পরিণতি হবে ছাত্রীর। এমনকী ভবিষ্যতে কখনও কোনও চাকরিও পাবেন না। হুমকিগুলো প্রথম কয়েকদিন চুপচাপ নিজেই সহ্য করে নিয়েছিলেন। সবশেষে ভাঙে ধৈর্যের বাঁধ। কলেজের মধ্যে সকলের সামনে শুধুমাত্র বিক্ষোভেই ফেটে পড়েননি তিনি। গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন।
অধ্যাপকের বিরুদ্ধে প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন তরুণী। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। বরং আরও কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। অবশেষে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভের মাঝে হঠাৎ নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে তাঁর সারা শরীর। অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। তাঁর বাঁচার আশা অত্যন্ত ক্ষীণ।
আরও পড়ুন: ফের বর্ষার দাপুটে ইনিংস, ভারী বৃষ্টিতে কাঁপবে একাধিক জেলা, ৫ দিন মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার বালাসোরে। পুলিশ জানিয়েছে, তরুণী ফকির মোহন কলেজের বি.এড-এর ছাত্রী ছিলেন। ওই কলেজের হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। পয়লা জুলাই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান তরুণী। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে, উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু সাতদিন পার করেও কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যথা ছিল না। অবশেষে কলেজের মধ্যে প্রিন্সিপালের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তরুণী ও তাঁর বন্ধুরা।

শনিবার কলেজের গেটের সামনে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। দলে ছিলেন তরুণীও। হঠাৎ সকলের মাঝখান থেকে উঠে সোজা কলেজের করিডোরে চলে যান। সেখানে গিয়েই গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাঁর শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখেই ছুটে আসেন সহপাঠীরা। তাঁরাও আগুন নেভাতে তোড়জোড় শুরু করেন। কয়েক মিনিট পর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীর দেহের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও একাধিক পড়ুয়া। তাঁরা ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন। আহত পড়ুয়াদের এইমস ভুবনেশ্বরে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
এদিকে কলেজের প্রিন্সিপাল দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেই অভিযুক্ত অধ্যাপক সমীর কুমার এবং তরুণীকে মুখোমুখি বসিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। অভিযোগটি মিথ্যে বলেই দাবি করেছিলেন অধ্যাপক। তবে তরুণী নিজের দাবিতে অনড় ছিলেন। অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না করা হলে, চরম পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন।
তরুণী জানিয়েছিলেন, হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট বারবার যৌন হেনস্থা করতেন তাঁকে। প্রায়ই সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তাব দিতেন। সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় কেরিয়ার শেষ করার হুমকি দিয়েছিলেন। অধ্যাপক এও জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে সঙ্গম না করলে, ফেল করিয়ে দেবেন। পরীক্ষায় ভাল লিখেও কোনও লাভ হবে না। বিষয়ে ফেল করলে ভবিষ্যতে কখনও কোনও চাকরিও পাবেন না তিনি।
