আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুরে নির্বাচনী তালিকা সংশোধনের (এসআইআর) একটি বৈঠকে যাননি এক সরকারি কর্মী। অভিযোগ, এই কারণে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। সেই অপমান ও মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে বিয়ের ঠিক আগের দিন আত্মহত্যা করলেন তিনি। সম্প্রতি একের পর এক এসআইআর কেন্দ্রিক দুর্ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন রাজ্যে। এর মধ্যেই এই ঘটনায় আবারও চাঞ্চল্য যোগীরাজ্যে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মৃত কর্মীর নাম সুধীর কুমার, বয়স ২৫ বছর। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পরদিনই তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের আগেই মঙ্গলবার সকালে ফতেহপুরের বাড়িতে সুধীরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সুধীরের বোন পুলিশকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, বিয়ের প্রস্তুতির জন্য তাঁর ভাই রবিবার সরকারি বৈঠকে যেতে পারেননি। এর পরেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। তিনি লিখেছেন, "এই ঘটনার পর থেকে আমার ভাই খুব দুশ্চিন্তা করছিল।"
তাঁর আরও অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে এক আধিকারিক সুধীরের বাড়িতে এসে তাঁকে সাসপেনশনের কথা জানান। সুধীরের বোন বলেন, "সরকারি কর্তাদের দেওয়া এই চাপ ও হেনস্থা সহ্য করতে পারেনি আমার ভাই। তার জন্যই এমন কাজ করেছে।"
খবর অনুযায়ী, আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিশেষ তালিকা সংশোধনের কাজ শেষ করার সময়সীমা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে এই কাজে যুক্ত কর্মীদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের পরিবারের অভিযোগ, কাজের প্রচণ্ড চাপের কারণেই কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দিনের পর দিন চূড়ান্ত মানসিক চাপে ভুগছেন। খবর অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলাতেও একই কাজ করা এক মহিলা বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) সঙ্গে। এরপর তাঁর ঝুলন্ত দেহ গত শনিবার উদ্ধার হয়। তাঁর পরিবারের দাবি, এসআইআর কাজের চাপেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
এছাড়াও, মধ্যপ্রদেশের রায়সেন এবং দামোহতে এই নির্বাচনী তালিকা সংশোধনের কাজে যুক্ত দুই শিক্ষক শুক্রবার অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন।
অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে এসআইআর-এর কাজ চলছে। এই কাজের জন্য নিযুক্ত এক শিক্ষকের মৃত্যুতে রাজ্যজুড়ে বড়সড় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, ওই শিক্ষক বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তদন্ত৷
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিক্ষকের নাম বিপিন যাদব। তাঁর বাড়ি জৌনপুর জেলার মালানি সরাই খাসে। তিনি নবাবগঞ্জ ব্লকের জৈতপুর মাঝা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এ ছাড়াও তিনি খেঁমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-এর দায়িত্বও সামলাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক অলোক কুমার সংবাদমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, ক্রমাগত কাজের চাপে মঙ্গলবার সকালে বিপিনবাবু বিষ খেয়ে ফেলেন। এর পরই তাঁর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। সহকর্মীরা দ্রুত তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর অনুযায়ী, বিপিনবাবুর পরিবার সরাসরি অভিযোগ করেছে- সরকারি অফিসারদের অতিরিক্ত চাপ ও দুর্ব্যবহারের কারণেই তিনি এমন চরম পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন।
মৃত্যুর আগে বিপিনবাবুর স্ত্রী তাঁদের ছোট ছেলেকে পাশে রেখে একটি ভিডিও রেকর্ড করেন, যা পরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওয় বিপিনবাবু নিজেই অভিযোগ করেন যে, তিনি 'এসআইআর' কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছেন। তিনি আরও জানান, এসডিএম এবং বিডিও নিয়মিত তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। তাঁর স্ত্রীও জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বিপিনবাবু খুব মানসিক কষ্টে ছিলেন।
অন্যদিকে প্রশাসন এই ভিডিওর অভিযোগ মানতে চায়নি। এই গুরুতর ঘটনার তদন্তের জন্য চিফ রেভিনিউ অফিসার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নিয়ে একটি তদন্তকারী দল গড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বর্তমানে বিপিন যাদবের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। এর পর তাঁর মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।
