আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই শুরু হল তুমুল বিশৃঙ্খলা ও একাধিকবার অধিবেশন মুলতবি। এই পরিস্থিতিতে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন। সংসদে তাঁকে বক্তব্য রাখতে না দেওয়ায় তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংসদ চত্বরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাহুল বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও অন্যান্য সরকারপক্ষের নেতা বক্তব্য রাখতে পারছেন। কিন্তু বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আমি বিরোধী দলনেতা — আমার অধিকার আছে কথা বলার, অথচ আমাকে বলা হচ্ছে না।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সরকার একটা নতুন পদ্ধতি নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সভা ছেড়ে চলে গেলেন। আলোচনা হতে পারে, যদি তারা সেটা হতে দেয়। কিন্তু প্রচলিত রীতিনীতিতে সরকারপক্ষের নেতারা যদি বলতে পারেন, তাহলে আমরাও বলার সুযোগ পাই। আমরা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সুযোগই দিল না।” রাহুল গান্ধী মনে করেন, সংসদীয় শিষ্টাচারকে অগ্রাহ্য করে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে মোদী সরকার। তিনি বলেন, “এই অধিবেশন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলতে চাই। কিন্তু আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

 আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কার: "রাজনৈতিক লড়াইয়ে ব্যবহার হচ্ছে ইডি", আইনজীবীদের তলব নিয়ে উদ্বেগ

প্রথম দিন থেকেই সংসদে কেন্দ্র ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘাতের ইঙ্গিত স্পষ্ট। সংসদে স্বাভাবিক আলোচনা হবে কি না, কিংবা বিরোধীরা তাদের দাবিদাওয়া কতটা তুলে ধরতে পারবেন — তা নিয়েই এখন রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা। অন্যদিকে, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস দল জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য মর্যাদা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে নতুন বিল উত্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও সরকারের তরফে তাতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে সূত্রের খবর।

আরও একটি ইস্যুতে বিরোধীরা আক্রমণের তোড় জোরালো করবে বলে জানা গেছে — আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনা, যাতে ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন তদন্তে পাইলটদের দোষারোপ করা হলেও বিরোধীদের দাবি, সরকারের উচিৎ পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে সংসদে জবাবদিহি করা। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী এই সব ইস্যুতে সরাসরি কিছু বলবেন না বলেই সূত্রের খবর। এই সপ্তাহেই তিনি তিন দিনের ইউকে সফরে যাচ্ছেন একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্যে। পরে তিনি মলদ্বীপেও যাবেন।

সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-সহ সব ইস্যুতেই সরকার আলোচনায় প্রস্তুত, তবে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলেননি তিনি। সরকারের প্রতিক্রিয়া মূলত সীমান্ত উত্তেজনার সময় সরকারের ‘সাফল্য’ এবং বিদেশ সফরে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের ভূমিকা তুলে ধরার দিকেই ঝুঁকবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে নগদ অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় বিরোধী-সরকার উভয় পক্ষই অভিন্ন সুরে তাঁর অভিশংসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রিজিজু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ১০০ জন সাংসদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়ে গেছে।

রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখর সংসদে রচনাত্মক রাজনীতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ভিন্নমত থাকতে পারে, বিতর্কও হোক, কিন্তু মন থেকে তিক্ততা দূর করতে হবে।” এই বাদল অধিবেশন চলবে ২১ আগস্ট পর্যন্ত — মোট ৩২ দিনে ২১টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দেশে-বিদেশে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে এই অধিবেশন ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়ে উঠতে চলেছে।