আজকাল ওয়েবডেস্কঃ একটি সুসংগঠিত ও সমন্বিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘অপারেশন শিবশক্তি’ চালায় পুঞ্চ সেক্টরে, ৩০ জুলাইয়ের ভোররাতে। এই অভিযান চালানো হয় নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে, যা সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের যৌথ গোয়েন্দা সমন্বয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্য থেকে জানা যায়, সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু জঙ্গি লুকিয়ে আছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে, নিরাপত্তা বাহিনী সম্ভাব্য অনুপ্রবেশপথে সুসংহতভাবে অ্যামবুশ বসায়। ভোররাতে, কন্ট্রোল লাইনের (LoC) কাছে নিরাপত্তা বাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে তীব্র গুলির লড়াই শুরু হয়। সূত্রে জানা গিয়েছে, সংঘর্ষে দু’জন জঙ্গি নিকেশ হয় এবং বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। সেনাবাহিনীর দ্রুত, সমন্বিত ও নিশ্চিত পদক্ষেপে কোনো বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দুটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও তার গুলি, একটি পিস্তল সহ গুলি, হ্যান্ড গ্রেনেড, দুটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED), ওষুধপত্র, যোগাযোগের যন্ত্র ও অন্যান্য রসদ। এত বড় মাত্রায় অস্ত্র ও রসদ উদ্ধার হওয়া প্রমাণ করে যে জঙ্গিরা দীর্ঘমেয়াদী সংঘর্ষের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল।
এই অভিযান ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সমন্বয়, কার্যকারিতা এবং অঙ্গীকারের প্রমাণ, যারা জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য নিয়ত কাজ করছে।
অপারেশন শিবশক্তি পাকিস্তান-পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য বড় ধাক্কা, যারা জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে বারবার সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। অঞ্চল জুড়ে এখনও তল্লাশি অভিযান চলছে, যাতে কোনও জঙ্গি গা ঢাকা দিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করা যায়।
প্রসঙ্গত, জম্মু ও কাশ্মীরের লিদওয়াস এলাকায় ‘অপারেশন মহাদেব’ নামে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে তিন জঙ্গিকে নিকেশ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং সিআরপিএফ। জানা যাচ্ছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছে পহেলগাঁও হামলার মূলচক্রী এবং শীর্ষ লস্কর-ই-তইবা কমান্ডার হাশিম মুসা। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুর ১২:৩৭ মিনিটে লিদওয়াস এলাকার জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চিনার কর্পস। এক ঘণ্টার মধ্যেই ড্রোন ফুটেজে তিনটি মৃতদেহ দেখা যায়, যা নিশ্চিত করে যে তিন জঙ্গি নিকেশ হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চলছিল গত দু’দিন ধরে। ডাচিগাম অরণ্য এলাকার গভীর থেকে একটি সন্দেহজনক রেডিও বার্তা ধরা পড়ে, যা পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তদন্ত শুরু হয়।
গোপন সূত্রে জানা যায়, এই জঙ্গিরা লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মহম্মদের যৌথ মডিউলের অংশ, যারা গত ১৪ দিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে ছিল। এই মডিউলে মোট ৫ থেকে ৭ জন জঙ্গি ছিল বলে অনুমান। সোমবার সকালে এই মডিউলের তিনজন সদস্যকে পৃথকভাবে শনাক্ত করে সেনা। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ, ২৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ও ৪ প্যারা ইউনিটের যৌথ বাহিনী ওই তিন জঙ্গিকে ঘিরে ফেলে এবং আচমকা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের নিকেশ করে। জানা গেছে, জঙ্গিরা একটি গাছের নিচে পাতার ঘন গাছপালার মধ্যে একটি অস্থায়ী গর্তে লুকিয়ে ছিল। এর আগে ১১ জুলাই, বৈসরান এলাকায় একটি চীনা স্যাটেলাইট ফোন সক্রিয় অবস্থায় ধরা পড়ে, যা গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নজর কাড়ে।
