আজকাল ওয়েবডেস্ক: অভিযোগ তুলেছিলেন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যৌন হেনস্থার অভিযোগ। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ শোনেনি সেকথা, অভিযোগ তেমনটাও। শনিবার অধ্যক্ষের ঘর থেকে বেরিয়ে কলেজের সামনেই গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। টানা কয়েকদিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর, সোমবার রাতে মৃত্যু হয় তরুণীর।
প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর আরও এক তথ্যও। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য, আত্মহত্যার চেষ্টার দশ দিন আগেই তরুণী জানিয়েছেন, তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তরুণী এর আগে যে চিঠি লিখেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষকে, তাতে লিখেছিলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে, বিএড বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সহকারী অধ্যাপক সমীর কুমার সাহু, আমাকে মানসিকভাবে হয়রানি করছেন। তিনি বারবার আমাকে হুমকি দেন, ফেল করিয়ে দেওয়ার। বাড়িতে জানালেও ফলাফল ভাল হবে না বলে হুমকি দেন।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিভাগীয় প্রধান বারবার যৌন সুবিধা চাইছেন। আমি সেই বিষয়ে ক্রমাগত মানা করেই চলেছি। এতে আমি আমার মানসিক শান্তি হারিয়ে ফেলেছি এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে, যদি কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমি আত্মহত্যা করব এবং বিভাগীয় প্রধান এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।‘ তারপরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তরুণী। সোমবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও পড়ুন: ১০ বছর আগেই বদ্ধ ঘরে মরে-গলে-পচে গিয়েছে ব্যক্তি! পাড়ার ছেলে বল আনতে ঘরে ঢুকে যা দেখে ফেলল
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন ওই পড়ুয়া। দিন কয়েক আগে কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির কাছে তরুণী অভিযোগ দায়ের করেন বলে খবর সূত্রের। সেখানেই সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করা হয়। তাতেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ। তারপর থেকে বেশ কয়েকদিন তরুণী এবং তাঁর সহপাঠীরা বিক্ষোভ দেখান। তাতেও কোনও লাভ হয় না। শনিবার একই বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ্যের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই বেরিয়ে এসে গায়ে আগুন দেন তরুণী। অন্যদিকে তরুণী নিজেকে অগ্নিদগ্ধ করার পর, অভিযুক্ত সমীর কুমার সাহুকে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শনিবারের পর থেকেই নজর ছিল তাঁর শারীরিক অবস্থার দিকে। আগেই জানা গিয়েছিল কাজ করছে না কিডনি। তা প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জানা গিয়েছিল তাও। সোমবার তরুণীর ভাই, দিদির শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে জানান, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন বলে জানানো হয়। জানানো হয়, এই সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তরুণীর পরিবারের তরফে গোটা ঘটনার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করা হয়েছে আগেই। তরুণীর ভাই সোমবার বলেন, 'অধ্যক্ষ বলেছেন আমার বোন তাঁর মেয়ের মতো, তিনি মামলাটি খতিয়ে দেখবেন। অধ্যক্ষ, প্রশাসনিক স্তরের লোকেরা সকলেই এর জন্য দায়ী। যদি তাঁরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। আমরা দাবি করছি যে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হোক এবং সমস্ত দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক যাতে অন্য কারও বোনের সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে।'
উল্লেখ্য, ঘটনার দিনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। হাড়হিম করা ওই ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, তরুণী নিজেকে অগ্নিদদ্ধ করার পর ওই অবস্থায় দৌড়ে চলছেন কলেজ করিডোর জুড়ে। এক যুবক তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আচমকা তাঁর জামাতেও আগুন লাগে, তারপরেই তিনি পিছু হটেন। পরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা আরেকজনও গুরুতর আহত হন। জানা যায়, তাঁর শরীরেরও প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। দু' জনেই ভুবনেশ্বরের এইমস-এ চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার রাতে তরুণীর মৃত্যু হয়। আরেকজন কেমন রয়েছেন? তা জানা যায়নি এখনও।
