আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশায় সম্প্রতি এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। কোরাপুট জেলার নারায়ণপাটনা ব্লকের নদিমেইটিকি গ্রামে ঘটে এই ঘটনা। খবরে জানা গিয়েছে, একই গোষ্ঠীর (ক্ল্যান) মধ্যে প্রেম করে বিয়ে করায় এক তরুণ দম্পতিকে চরম শাস্তি পেতে হয়। কাঠের হালের সঙ্গে বেঁধে গোটা গ্রাম ঘোরানো হয় দম্পতিকে৷ এমনকি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাঁদের৷ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই চাঞ্চল্য। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ঘটনাটি ঘটে চলতি মাসের ১৩ জুলাই, অর্থাৎ রবিবার। সোমবার ভিডিও সামনে আসতেই তা মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, একদল গ্রামবাসী ওই তরু দম্পতিকে  গরুর মত হালের সঙ্গে বেঁধে দিয়েছে। এরপর সেটি নিয়ে তাদের দিয়ে জোর করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, যুবকের গলায় দড়ি বেঁধে দিয়েছে। এরপর মাঝে মাঝেই লাঠি দিয়ে মারছে তাঁদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণ যুগল দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে ছিল। সম্প্রতি তারা বিয়ে করে। খবর মারফত তাঁরা একই গোষ্ঠীর। তাই সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী তাঁদের সম্পর্ককে 'অশুদ্ধ' এবং 'অবৈধ' বলে দাগিয়ে দিয়েছে কিছু গ্রামবাসী। এই সম্পর্ককে চরমভাবে নিষিদ্ধ মনে করছে তারা৷  তারা এক অলৌকিক বিশ্বাসের জেরে এমন কান্ড ঘটিয়েছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে৷ এক গোষ্ঠীতে বিয়ে করলে গ্রামের উপর অভিশাপ নেমে আসবে৷ বিশেষ করে ফসলের উৎপাদনে ক্ষতি হবে বলে অভিযুক্ত গ্রামবাসীদের দাবি। 

আরও পড়ুনঃ গায়ে আগুন দিয়ে কলেজ করিডোরে দৌড়েছিলেন তরুণী, ঝলসে গিয়েছে শরীরের ৯৫ শতাংশই, আর কী জানাল

খবর অনুসারে, গ্রামের প্রবীণদের নেতৃত্বে একটি 'পঞ্চায়েত' বসে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দম্পতিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। গ্রামের অন্যান্যরা যাতে এমন সাহস না পায়, তার জন্য প্রকাশ্যে এই অমানবিক শাস্তি দেওয়া হয় দম্পতিকে।

তরুণ ও তরুণীর এই চূড়ান্ত অপমান ও নিপীড়নের পরও গ্রামবাসীরা থেমে থাকেনি। এরপর একটি ‘শুদ্ধিকরণ অনুষ্ঠান’ আয়োজন করে তারা। তাদের বিশ্বাস এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গোটা গ্রামের ‘পবিত্রতা’ পুনরায় ফিরে আসবে। শুদ্ধিকরণ শেষে গ্রামের প্রবীণরা সিদ্ধান্ত নেন, দম্পতি এখন একসঙ্গে বাড়িতে থাকতে পারবে। তবে সামাজিকভাবে এখনও তারা স্বীকৃতি পায়নি বলে জানা গিয়েছে।

ঘটনার জেরে পুলিশের তরফ থেকে পূর্ণ তদন্ত চলবে বলে জানান হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। নারায়ণপাটনার ইনস্পেক্টর ইন চার্জ (IIC) প্রমোদ নায়ক জানিয়েছেন, 'ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ দল পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার মাত্র কয়েকদিন আগেই রাজ্যের রায়গড়া জেলায় একই ধরনের ভিন্ন আরেকটি ঘটনা ঘটে। সেখানেও এক তরুণ দম্পতিকে জোর করে জোয়াল কাঁধে তুলে মাঠে হাল চাষ করতে বাধ্য করা হয়। ওই ঘটনাটিতেও প্রেম করে বিয়ে করার 'অপরাধে' এই শাস্তি দেওয়া হয়।

বর্তমানে অভিযুক্তদের শনাক্তকরণ চলছে৷ দ্রুত তাদের জেরা করা হবে৷ এমন ঘটনার পেছনে আসল 'মোটিভ' কী তা খতিয়ে দেখবে। এই ধরণের নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে পুলিশ।