আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরিস্থিতি এমন, ওয়াকিবহাল মহল বলছে, মহারাষ্ট্রের রাজনীতি এখন উত্তাল হয়ে ওঠে কেবল একটা ঠাট্টাতেই। এমনিতেই গত কয়েকবছর ধরে মারাঠাভূম উত্তাল। শিবসেনা ভাঙল, এনসিপি ভাঙল। শিবসেনা ভেঙে তৈরি হল শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরে শিবির, শিবসেনা শিন্ডে শিবির। শিন্ডে শিবির প্রকৃত শিবসেনার তকমাও পেয়ে গেল। এই শিবসেনার ভাঙন বদলে দিয়েছিল মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। উদ্ধবের হাত ধরে শিন্ডে আলাদা সেনা শিবির নিয়ে বিজেপির কাছে যেতেই, মহারাষ্ট্রের সরকার পড়ে যায়। উদ্ধবকে সরতে হয়, এবং মাস্টারস্ট্রোকে বিজেপি তাঁর জায়গায় বসায় সেই শিন্ডেকেই। উদ্ধব শিবির তখন থেকেই একনাথ শিন্ডেকে গদ্দার, বিশ্বাসঘাতক বলেছে বারেবারে। 

কুণাল-বিতর্কে নিজের পুরনো কথা আরও একবার যেন বলার সুযোগ পেয়ে গেলেন বালাসাহেব পুত্র। কিংবা নিজের সমর্থনে পেলেন আরও একজনকে। 


ভাঙচুর, নেতাদের কাদা ছোড়াছুঁড়ির সূত্রপাত স্রেফ একটি কৌতুক-মন্তব্যে। এক অনুষ্ঠানে কুণাল কামরা মহারাষ্ট্রের রাজনীতি, এবং শেষভাগে একনাথ শিন্ডেকে নিয়ে বেশ কৌতুক করে গান বেঁধেছেন। তিনি শিবসেনা ভেঙে দুই দল, এনসিপি ভেঙে দুই দল তৈরি হওয়ার কথা যেমন বলেছেন নিজের মন্তব্যে, তেমনই একনাথ শিন্ডেকে নিয়ে গান বেঁধেছেন বিখ্যাত বলিউড গানে ‘দিল তো পাগল হ্যায়’-র সুরে। তাতে শিন্ডেকে নাম না করে গদ্দার বলেছেন খোলাখুলি, বালাসাহেব-পুত্র উদ্ধব রাজনীতিতে থাকার পরেও যেভাবে শিন্ডে-সেনা ‘আসল সেনা’-র তকমা পেয়েছে, রসিকতা করেছেন তা নিয়েও। কটাক্ষ করে ‘বাবা-চুরি’র উল্লেখ করেছেন।

ব্যাস। এই এক কৌতুক মন্তব্যে একেবারে উত্তাল মারাঠাভূম। একদিকে শিন্ডে শিবিরের লোকজন মুম্বইয়ের জনপ্রিয় স্ট্যান্ড-আপ কমেডি ভেন্যু, হ্যাবিট্যাট স্টুডিয়োতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে। পুলিশ তার প্রেক্ষতে একগুচ্ছ শিবসেনা নেতাকে ইতিমধ্যে আটক করেছে। 

ঘটনায় ময়দানে নেমে এসেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। তাঁর বক্তব্য, কামরার জানা  উচিত মহারাষ্ট্রের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কে বিশ্বাসঘাতক, কে নয়। কামরার ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। তবে এটুকু নয়, কামরাকে বাম উদারপন্থী এবং শহুরে নকশালরা সম্মানিত ব্যক্তিত্ব বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।


 উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারও মনে করিয়েছেন, সকলের বাক স্বাধীনতার একটা সীমা থাকা উচিত। তাঁদের মত, কুণালের মন্তব্যের পিছনে রয়েছে মদত, উস্কানি। মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যোগেশ কদম  সোমবার বলেছেন, মারাঠা সরকার বিতর্কিত কৌতুক অভিনেতা কুণাল কামারার কল রেকর্ড, অ্যাকাউন্টে লেনদেনের তদন্ত চালাবে।  যদিও এর কুণাল সাফ জানিয়েছেন, তিনি একেবারেই নিজের বক্তব্যে অনুতপ্ত নন। তাঁর কৌতুক বা মন্তব্যের পিছনে অন্য কোনও দলের নেতাদের হাত নেই, তাও সাফ জানিয়েছেন তিনি।

গোটা ঘটনায় বেশ লক্ষণীয় উদ্ধব ঠাকরের মন্তব্য। তিনি বলছেন, শিন্ডেকে গদ্দার, বিশ্বাসঘাতক বলার মধ্যে কোনও ভুল নেই। কোথাও গিয়ে হয়তো মহারাষ্ট্রের মানুষকে বোঝাবার আর একটা সুযোগ পেলেন, যে তিনি ভুল ছিলেন না। 

কিন্তু এক কৌতুক অভিনেতার মন্তব্যে যেভাবে উত্তাল মারাঠাভূম, তাতে সেখানকার রাজনীতি নিয়ে ফের চর্চা।