আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ, ১৭ জুলাই, আসামের গোয়ালপাড়ায় জেলার বেতবাড়ি গ্রামে পুলিশ গুলিচালনা করে এক ১৯ বছরের যুবককে হত্যা করেছে এবং অন্তত চারজনকে গুরুতরভাবে আহত করেছে। ঘটনাটি ঘটে পাইকান রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায়, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা একটি চলতে থাকা উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই উচ্ছেদ অভিযান মূলত মুসলিম পরিবারগুলিকে লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়েছে।

নিহত যুবকের নাম সাকওয়ার আলি। আহতদের মধ্যে ২৭ বছর বয়সী কাসিমুদ্দিনকে গৌহাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তিনি সংকটজনক অবস্থায় রয়েছেন। গত ১২ জুলাই প্রশাসন পাইকান রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকার ১,০৮০টি মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়, দাবি করে যে তারা বনভূমি দখল করে বসবাস করছিল। যদিও স্থানীয়দের দাবি, এই এলাকা একটি রাজস্ব গ্রাম এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন।

এই অঞ্চলের বাসিন্দারা মূলত পূর্ববঙ্গীয় মুসলিম, যাঁরা পূর্বে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত অবমাননাকর শব্দ ‘মিয়া’কে নিজের পরিচয়ের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং নিজেদের ‘মিয়া মুসলিম’ বলে পরিচয় দেন। উচ্ছেদের পর অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও, অনেক পরিবার কাছাকাছি এলাকায় ত্রিপল টাঙিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় তৈরি করে অবস্থান করছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে লোহার রড, ইঁটসহ বাড়ির কিছু সামগ্রী উদ্ধার করার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, পুলিশ তাদের বারবার এলাকা ছাড়তে চাপ দিচ্ছিল, এমনকি অস্থায়ী ত্রিপলও খুলে ফেলছিল এবং তাঁদের জিনিসপত্রও নষ্ট করে দিচ্ছিল।

আরও পড়ুন: বিয়ের প্রতিশ্রুতি, শারীরিক সম্পর্ক: 'আপনি কি ধোয়া তুলসীপাতা?' পুরুষ সঙ্গীকে জামিন দিয়ে মহিলাকেই কড়া ধমক সুপ্রিম কোর্টের!

আসুদুবি রাজস্ব গ্রামের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী আবুল কালাম জানান, তাঁর ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলার পর তিনি ত্রিপলের নিচে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘‘হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখনো পুরো এলাকা কার্ফুর মতো অবস্থা।’’ আজ সকালেই উত্তেজনা তীব্র আকার নেয়, যখন সরকারি দল একটি এক্সকাভেটর এনে বেতবাড়ি এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে পথ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হন। এই প্রতিবাদে অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (AAMSU) ও শত্ৰ মুক্তি সংগ্রাম সমিতির (SMSS) সদস্যরাও যোগ দেন।

একজন ৩৫ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘‘আমরা যখন এক্সকাভেটর আটকাতে যাই, পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে।’’ AAMSU নেতাও অনিমুল ইসলাম পুলিশের লাঠিচার্জের বিষয়টি উল্লেখ করেন। ‘‘আমরা মাঠের দিকে এগোতেই তারা গুলি চালায়। আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমার সামনে লোকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যাচ্ছিল,’’ বলেন এক প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন ত্রাণবাহী গাড়িকেও ঘটনাস্থলে ঢুকতে দিচ্ছে না। একজন বনকর্মী জগদীশ বর্মণ নাকি বলেছিলেন, ‘‘নিজের পয়সা খরচ করে হলেও আমি তোদের সবাইকে গুলি করে মারব।’’ যদিও এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি সংবাদমাধ্যম।

আহতদের মধ্যে কাসিমুদ্দিন ছাড়াও রয়েছেন ৩০ বছর বয়সী আমির হামজা, সাইফুল আলি এবং আকাশ আলি। তাঁদের সকলেরই আঘাত গুরুতর বলে জানা গিয়েছে। SMSS নেতা আল মুস্তাফিজুর রহমান এই ঘটনাকে “উচ্ছেদের নামে মিয়া মুসলিমদের ওপর অমানবিক হামলা” বলে বর্ণনা করেছেন। যদিও কেউ কেউ দাবি করেছেন যে পুলিশের একজন সদস্যও এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন, তা নিশ্চিত করা যায়নি।