আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্ষা মানেই রোমান্টিক আবহ। রোমান্সে ডুব দিতে মন চায় অনেকেরই। কিন্তু এই বর্ষার ভয়াবহ রূপে তটস্থ থাকেন একাংশের মানুষ। তাঁদের কাছে বর্ষা মানেই চরম দুর্ভোগ‌। প্রিয়জন, পরিজন, বন্ধুবান্ধব হারিয়ে বর্ষা যেন নিঃস্ব করেই দেয় কত শত পরিবারকে। 

প্রতিবার বর্ষায় রাজ্যে রাজ্যে দুর্ভোগের চিত্র প্রকাশ্যে আসে। কোথাও বন্যা, কোনও ধস, কোথাও আবার মেঘভাঙা বৃষ্টি, কোথাও বা হড়পা বান। বর্ষা জুড়েই একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয় বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। শুধু গ্রাম, মফস্বল নয়, চরম ভোগান্তি হয় শহরেও। খোদ রাজধানীতেই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে গত বছর। 

চলতি বছরে দেশজুড়ে কোথাও স্বাভাবিক, কোথাও কোথাও আবার স্বাভাবিক তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল মৌসম ভবন। এই প্রবল বৃষ্টির জেরেই চলতি বছরে লাফিয়ে বাড়ল মৃত্যুমিছিল। 

হড়পা বানে বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডে। পরপর মেঘভাঙা বৃষ্টিতে রীতিমতো বিপর্যস্ত পাহাড়ি রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দপ্তর। ৬ আগস্ট, বুধবার রাজ্যসভায় একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে এনেছে তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, চলতি বছরে প্রবল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দেশজুড়ে ১৬২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

তালিকার শীর্ষে প্রথম পাঁচটি কোন রাজ্য? পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথমেই রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। এই রাজ্য জুলাই পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। এই রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪৩ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে হিমাচল প্রদেশ। এই রাজ্যে ১৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। চতুর্থ স্থানে কর্ণাটক। প্রাণহানি হয়েছে ১০২ জনের। পঞ্চম স্থানে রয়েছে বিহার। এই রাজ্যে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট ১৬২৬ জনের মধ্যে ৬০ শতাংশ প্রাণহানির ঘটনা এই পাঁচ রাজ্যেই ঘটেছে। 

আরও পড়ুন: আজও তুমুল বৃষ্টি, তোলপাড় হবে ১১ জেলা, টানা সাতদিন এই জেলাগুলিতে প্রবল দুর্যোগের সতর্কতা

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে জুলাই পর্যন্ত এই তালিকায় অন্যতম হল উত্তরাখণ্ডে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই রাজ্য ও তছনছ হয়েছে। উত্তরাখণ্ডে প্রবল বৃষ্টির জেরে শুধুমাত্র ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও নিখোঁজ বহু মানুষ। প্রাণ গেছে ৬৭ গবাদিপশু, বন্যপ্রাণীর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯.৪৭ হেক্টর চাষের জমি। 

প্রাণহানির তালিকা প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, চলতি বছরে বর্ষায় একটানা তুমুল দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে একাধিক রাজ্য। এর পাশাপাশি পরিকাঠামো আরও উন্নত করার আর্জিও জানিয়েছে তারা। প্রবল দুর্যোগের মধ্যে একটানা উদ্ধারকাজ চালিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। জেলায় জেলায় মোতায়েন একাধিক টিম। তা সত্ত্বেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দেশজুড়ে ৫২ হাজার পশুর মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র হিমাচল প্রদেশেই ২৩ হাজার ৯৯২ টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। অসমে ১৪ হাজার ২৬৯টি, জম্মু ও কাশ্মীরে ১১ হাজার ৬৭টি, মধ্যপ্রদেশে এক হাজার ৬২৫টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। 

এদিকে মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী পাঁচদিন দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই বজ্রবিদ্যুৎ সহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে জারি রয়েছে লাল, কমলা ও হলুদ সর্তকতা। আগস্টেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে দেশের বেশিরভাগ শহরে‌। এই পরিস্থিতিতে মৃত্যুমিছিল আরও বাড়তে পারার আশঙ্কা রয়েছে।