আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি হাড়হিম কাণ্ড। ঘটনাটি ঘটেছে ফতেহগড় থানা এলাকার গণেশপুরা গ্রামে। এক কৃষককে নৃশংসভাবে খুন করা হয়৷ শুধু তাই নয়, তাঁর দুই মেয়েকে চরম হেনস্থা করা হয়। অভিযোগে নাম জড়াল এক বিজেপি নেতা ও তাঁর সহযোগীদের। পুলিশ সূত্রে খবর, রাম স্বরূপ ধকড় নামে ওই কৃষক যখন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নিজের খেতের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগ, বিজেপি নেতা মহেন্দ্র নাগর ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা রাম স্বরূপ ধকড়কে ঘিরে ধরে আচমকা লাঠি ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এটি ঘটে মাঝপথে। এরপরই তাঁর দেহের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয় অভিযুক্তরা। নিহত কৃষকের পরিবারের অভিযোগ, মহেন্দ্র নাগর দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকার কিছু কৃষকদের ভয় দেখিয়ে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করছিলেন। জানা গিয়েছে রাম স্বরূপ ধকড় জমি বেচতে রাজি না হওয়াতেই তাঁর ওপর এমন ভয়ঙ্কর হামলা চালানো হয়েছে।
বাবা-মায়ের চিৎকার শুনে রাম স্বরূপ ধকড়ের দুই মেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তাঁদের ওপরেও চড়াও হয় অভিযুক্তেরা। নিহতের এক মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছিলাম। ওরা আমার ওপর বসে পড়ে মারধর করে। এমনকী আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে দেয়। ওরা আমার দিকে গুলিও ছোড়ে। বাবা-মা খেতে যাচ্ছিলেন। তখনই ওরা এসে তাঁদের মারতে শুরু করে। আওয়াজ শুনে আমরা ছুটে যাই। মা বাধা দিতে গেলে, ওরা বাবার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়।"
নিহত কৃষকের ভাই রামকুমার জানিয়েছেন, অভিযুক্তেরা প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায়। তিনি বলেন, "ওরা মেয়ে দু'টির পোশাক ছিঁড়ে দেয়। প্রায় ২০ জন মিলে শূন্যে গুলি চালাচ্ছিল। তাই ভয়ে আমরা কেউ এগিয়ে যেতে পারিনি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডব চলে। অভিযুক্তেরা প্রথমে একটি ট্রাক্টর ও পরে একটি গাড়িও তাঁর ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়।"
পুলিশ আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, হামলার পর আহত কৃষককে প্রায় এক ঘণ্টা হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। অভিযুক্তেরা বন্দুক দেখিয়ে তাঁর দেহ ঘিরে রেখেছিল। পরে ধকড়কে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় মহেন্দ্র নাগর, তাঁর পরিবারের তিন মহিলা-সহ আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে খুন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ফতেহগড় থানার ইনচার্জ জয়নারায়ণ শর্মা বলেন, "নিহত পরিবারের সদস্যদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে জোরদার তল্লাশি অভিযান চলছে।"
আরও পড়ুন: স্ত্রী নয়, যন্ত্রই পূরণ করবে সব চাহিদা! নিজের তৈরি রোবটকে বিয়ে করে চমক দিলেন ইঞ্জিনিয়র
বামোরির কংগ্রেস বিধায়ক ঋষি আগরওয়াল এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, "মধ্যপ্রদেশে হিংসা, লুটপাট ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আর এই সব ঘটছে তাঁর নাকের ডগায়। পুলিশ এখন ক্ষমতাশালীদের ভয়ে কাজ করতে পারছে না।"
গণেশপুরার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মহেন্দ্র নাগর দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বিভিন্ন কৃষকদের ভয় দেখিয়ে আসছিলেন। তার দাপটে প্রায় ২৫ জন কৃষক নামমাত্র দামে নিজেদের জমি বেচে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
