আজকাল ওয়েবডেস্ক: মেয়ের স্বপ্ন, আর সেই স্বপ্নপূরণের জন্য এক বাবার অদম্য জেদ। সঙ্গে এক বস্তা ভর্তি কয়েন। এ বারের ধনতেরাসে আশা আর ভালোবাসার এমনই এক মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্পের সাক্ষী থাকল ছত্তিশগড়ের জশপুর জেলার একটি টু-হুইলার শোরুম।
বজরং রামের মেয়ে চম্পা ভগতের শখ হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ টাকা দামের একটি স্কুটার কেনার। সামান্য কৃষক বজরং রামের কাছে এই শখ পূরণ করা প্রায় অসাধ্য সাধন ছিল। কিন্তু ভালোবাসার কাছে যে পাহাড়ও মাথা নোয়ায়! গত ছ'মাস ধরে বজরং রাম রোজ একটু একটু করে পয়সা জমিয়েছেন একটি টিনের কৌটোয়। সাধ্যমতো যা পেরেছেন, তাই-ই জমিয়েছেন। অবশেষে সেই সমস্ত কয়েন এক বস্তায় ভরে তিনি সোজা হাজির হন হোন্ডার শোরুমে।
বস্তাভর্তি খুচরো দেখে শোরুমের কর্মীরা প্রথমে অবাক হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেই বস্তার পেছনের গল্প শুনে তাঁদের বিস্ময় বদলে যায় শ্রদ্ধায়। শোরুমের ডিরেক্টর আনন্দ গুপ্ত নিজেও আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, "ব্যাপারটা শুধু টাকার নয়। এটা এক জন মানুষের কঠোর পরিশ্রমের প্রতি সম্মান। যাঁর নিষ্ঠা আমাদের সকলকেই অনুপ্রেরণা জোগায়, তাঁকে পরিষেবা দিতে পারাটাও একটা সম্মানের।"
গুপ্তা ওই পরিবারকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান, চা খেতে দেন এবং কর্মীদের কয়েন গোনার নির্দেশ দেন। কাউন্টারে এক এক করে পড়তে থাকে খুচরো পয়সা, ঝনঝন শব্দ। প্রতিটি মুদ্রার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল এক বাবার এক এক দিনের পরিশ্রম, আত্মত্যাগ আর অফুরন্ত ভালোবাসা।
গুনে দেখা যায় মোট ৪০,০০০ টাকা জমেছে। এরপর বজরং রাম জানান, বাকি টাকার জন্য তিনি ঋণ নেবেন। সমস্ত কাগজপত্র তৈরি হওয়ার পর তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় মেয়ের স্বপ্নের ব্র্যান্ড নিউ হোন্ডা অ্যাক্টিভার চাবি।
বজরং রাম স্কুটারে স্টার্ট দিতেই মেয়ে চম্পার দু'চোখ বেয়ে নামে আনন্দের অশ্রু। তাঁর কাছে এটা কেবল একটি স্কুটার নয়, এটা ছিল তাঁর বাবার বিশ্বাস, তাঁর অশেষ পরিশ্রম আর এই নীরব বার্তা যে, ভালোবাসা ঠিক নিজের রাস্তা খুঁজে নেয়। এক অমূল্য সম্পদের মতো চাবিটা ধরে সে বলে, "এটা আমার জীবনের সবথেকে খুশির দিন।"
দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে, শোরুমের "স্ক্র্যাচ অ্যান্ড উইন" অফারে ওই পরিবার একটি মিক্সার গ্রাইন্ডারও জেতে। তাঁদের এই অসাধারণ যাত্রার কাছে এটি একটি ছোট্ট, একইসঙ্গে প্রতীকী পুরস্কার হয়ে ওঠে। পরিবারটি যখন শোরুম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন উপস্থিত জনতা এবং কর্মীরা সকলে হাততালি দিয়ে ওঠেন।
