আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে মুখ খুবড়ে পড়েছে ইন্ডিয়া জোট। আসম সংখ্যা অনেকটাই কমেছে আরজেডি-র। শোচনীয় বিরোধী জোটের অঘোষিত প্রধান কংগ্রেসের অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের কৌশল, নেতৃত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছে জোটের ছোট আঞ্চলিক শরিকরা। নেতৃত্ব নিয়ে আগে প্রশ্ন উঠলেও তা এতটা তীক্ষ্ণ ছিল না। তবে এবার শরিকদের চাপা অসন্তোষ তীব্র হয়েছে। বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন একাধিক আঞ্চলিক শরিকদলের নেতারা। আবার অনেকে জোট ছাড়ার পক্ষে সওয়াল করছেন। ফলে, বিষ বাঁও জলে ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ।
জেএমএম ইন্ডিয়া জোট ছাড়ার পক্ষে
বিহারে ভোটের আগে জোটে প্রথম বড় ফাটল দেখা দেয়। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা বিহার আসন ভাগাভাগি থেকে বেরিয়ে যায়। হিমন্ত সোরেনের দল জোটের বড় অংশীদারদের আসন ভাগাভাগির অঙ্কে তাদের আলোচনায় পাশে না রাখার এবং পূর্ববর্তী আলোচনায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তোলে।
জেএমএম নেতারা তখন থেকেই বলেছেন যে, বিহার ভোট পর্বটি একটি বৃহত্তর সমস্যাকে প্রতিফলিত করেছে। স্পষ্ট হয়েছে যে, জোটের আঞ্চলিক শরিকদের সমান অংশীদার হিসাবে নয় বরং 'ছোট অংশীদার' হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দলটি এখন ইন্ডিয়া জোটে থাকবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে।
শিবসেনা (উদ্ধব শিবির) জোটের প্রক্রিয়া এবং কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে
বিহারের রায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিবসেনা (উদ্ধব শিবির)। তারা এটিকে বিরোধীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা বলে অভিহিত করেছে। সিনিয়র নেতারা কেবল নির্বাচনী কৌশল নয়, বরং ইন্ডিয়া ব্লকের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
দলীয় মুখপত্রে লেখা হয়েছে যে, রাজ্য-স্তরের কংগ্রেস সংগঠনগুলি একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে - যার মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে একা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাও বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত - যা যৌথ কৌশলকে দুর্বল করে দিয়েছে। শিবসেনা নেতৃত্ব বিশ্বাস করে যে, বড় শরিকরা যদি রাজ্যগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শরিকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে ব্যর্থ হয় তবে ইন্ডিয়া ব্লক কাজ করতে পারবে না।
সমাজবাদী পার্টি কাঠামোগত পুনর্গঠনের জন্য জোর দিচ্ছে
অখিলেশ যাদব নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি স্পষ্টভাবে বলেছে যে, জোটের একটি গুরুতর পথ সংশোধন প্রয়োজন। সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব বিহারে পদ্ধতিগত অনিয়মগুলিকে চিহ্নিত করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে ভবিষ্যতের ভোটের প্রতিযোগিতাকে লাইনচ্যুত করার জন্য অনুরূপ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপকে অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
বৃহত্তর বিরোধী দলের মধ্যে, কিছু কণ্ঠস্বর আরও বিকেন্দ্রীভূত নেতৃত্বের মডেলের জন্য জোর দেওয়া শুরু করেছে, যেখানে আঞ্চলিক দলগুলি - বিশেষ করে যাদের রাজ্যে শক্তিশালী পদচিহ্ন রয়েছে - জাতীয় কৌশলে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে। এই আলোচনায় এসপি একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
আপ-এর স্বাধীন লাইন নতুন প্রাসঙ্গিকতা অর্জন করেছে
ভোটের কয়েক মাস আগে আম আদমি পার্টির বিহারে আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্তকে এখন জোটের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলির প্রাথমিক স্বীকৃতি হিসাবে পুনর্ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
আপ নেতারা যুক্তি দিয়েছেন যে, রাজ্য-স্তরের সম্প্রসারণকে একটি শিথিলভাবে সমন্বিত জাতীয় প্ল্যাটফর্মের জন্য বলি দেওয়া যাবে না। ইন্ডিয়া ব্লক যদি সমন্বয় এবং আসন ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগের সমাধান না করে তবে অন্যান্য আঞ্চলিক মিত্রদের স্বায়ত্তশাসনের উপর দলের জোরকে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি নমুনা হিসাবে দেখা হচ্ছে।
কংগ্রেসের ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই
কংগ্রেসের জন্য, বিহারের ফলাফল জোটের ভেতর থেকে অস্বস্তিকর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সিনিয়র নেতারা ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেছেন যে একটি প্রধান হিন্দি-বলয়ের রাজ্যে দলের দুর্বল পারফরম্যান্স আসন্ন আসনরফা আলোচনায় তার দর কষাকষির ক্ষমতাকে দুর্বল করেছে।
বেশ কয়েকটি শরিক জানিয়েছে যে, কংগ্রেসকে অবশ্যই তার সাংগঠনিক পদ্ধতি, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এবং প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করতে হবে যদি জোটকে টিঁকিয়ে রাখতে হয়। অন্যরা যুক্তি দেন যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা ছাড়া জাতীয় জোট সফল হতে পারে না, যা বর্তমানে অনুপস্থিত।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন-
স্বল্পমেয়াদে, এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য জরুরি যোগাযোগ, আত্মবিশ্বাস তৈরির ব্যবস্থা এবং আসন ভাগাভাগির বিষয়ে নতুন করে কৌশল তৈরি। দীর্ঘমেয়াদে, জোটকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা আঞ্চলিক দলগুলির শক্তিকে আরও ভালভাবে প্রতিফলিত করার জন্য নিজেদের পুনর্গঠন করতে ইচ্ছুক কিনা।
শরিকরা একটি কঠিন পছন্দ বিবেচনা করছে: এমন একটি জোটে থাকবে যার নেতৃত্ব চাপের মধ্যে রয়েছে- অথবা কষ্টার্জিত, রাজ্য-স্তরের প্রাসঙ্গিকতা রক্ষা করার জন্য একটি স্বাধীন পথ তৈরি করবে।
আপাতত, ইন্ডিয়া জোটে অস্থিরতা অব্যাহত, পরিবর্তনের দাবি আরও জোরদার হচ্ছে। বিহারের রায় যা আরও তরান্বিত করেছে।
