আবু হায়াত বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরকে নিয়ে বিড়ম্বনা বাড়ছে কংগ্রেসের। অন্যদিকে, বাড়ছে বিজেপি ঘনিষ্ঠতা! প্রায় দিনই মোদি সরকারের প্রশংসায় মেতেছেন তিরুবনন্তপুরের কংগ্রেস সাংসদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে লিখছেন নিবন্ধ। দলীয় শৃঙ্খলার পরোয়া না করে নিজের দলকেই কার্যত বিপাকে ফেলছেন। খোদ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন থারুর।
সম্প্রতি একটি নিবন্ধ লিখেছেন থারুর। যে নিবন্ধে ইন্দিরা গান্ধির সময়ের জরুরী অবস্থার তীব্র সমালোচনা করেছেন শশী থারুর। সমালোচনা করেছেন নাসবন্দিরও (পুরুষদের নির্বীজকরণ)। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের সাম্প্রতিক নিবন্ধ দলের অন্দরে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষিতে তাঁকে নিশানা করছে দলের একাংশ। তোতাপাখির সঙ্গে তুলনা টেনেছেন লোকসভার কংগ্রেসের হুইপ মনিকম টেগোর। নাম না করে থারুরকে তাঁর কটাক্ষ,‘যখন একজন সহকর্মী হুবহু বিজেপির মতো কথা বলতে শুরু করেন, তখন ভাবতে হয়- পাখিটা কি তোতাপাখি হয়ে যাচ্ছে?’
এমনিতেই বিজেপি গত কয়েকবছর ধরে কংগ্রেস সরকারের জরুরী অবস্থা জারির ঘটনাকে খুঁচিয়ে তুলেছে। দেশের রাজনীতিতে ‘ইমার্জেন্সি’ এখন এক অন্যতম বিতর্কিত ইস্যুও। বিজেপি সরকার ২৫ জুন দিনটিকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করার পর থেকে বিতর্ক আরও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ শাসকদলের শীর্ষ নেতারা জরুরি অবস্থাকে স্বাধীন ভারতের ‘সবচেয়ে অন্ধকার সময়’ বলে আখ্যা দিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন।
এই পরিস্থিতিতে 'আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম প্রজেক্ট সিন্ডিকেট'-এ একটি নিবন্ধ লেখেন থারুর, যেখানে তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সির সময় যে বাড়াবাড়ি হয়েছিল, তা অনেকটাই আড়াল করা হয়েছে।’ তিনি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির ছেলে সঞ্জয় গান্ধির ভূমিকা এবং জোরপূর্বক পুরুষদের নির্বীজকরণ (নাসবন্দি) সমালোচনা করেন। ১৯৭৫-এ কীভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছিল, কীভাবে বিরোধীদের দমন, বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করাটা দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা উল্লেখ করেছেন। তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য, ‘ইন্দিরার সময় গণতন্ত্রের সব স্তম্ভকে মৌন করে রাখা হয়েছিল। বিচার বহির্ভূত হত্যা আকছার ঘটত।’
এই নিবন্ধ প্রকাশ্যে আসার পর অনেকে মনে করছেন, থারুর বিজেপির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন। এর আগে ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও প্রধানমন্ত্রী মোদির ভূয়সী প্রশংসা করায় তাঁর অবস্থান নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি তিনি পাঁচটি দেশে একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি তুলে ধরেন। এই পদক্ষেপ বিজেপি নেতাদের প্রশংসাও কুড়িয়েছিল।
মার্কিন মুলুকে অপারেশন সিঁদুরের জয়গান গেয়ে পবন খেরা, উদিত রাজ, জয়রাম রমেশের মতো নেতাদের খোঁচার মুখে পড়তে হয়েছে শশী থারুরকে। কিছু দিন আগেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক প্রশ্নের জবাবে শশী থারুরকে নিয়ে বলেছিলেন,‘আমাদের জন্য সবার আগে দেশ। কিন্তু কারও কারও জন্য মোদিই সবার আগে। যার যা খুশি সে লিখতেই পারেন।’
কংগ্রেস সূত্রের খবর, যেভাবে দল বিরোধী বক্তব্য রাখছেন শশী থারুর। আগামী দিনে বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। দলবিরোধী মন্তব্যের পর কংগ্রেসের দরজা শশীর জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
