আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনল বিজেপি। জগদীপ ধনখড়ের বিতর্কিত কার্যকালের অবসান ঘটিয়ে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন অভিজ্ঞ সংগঠক ও দক্ষিণ ভারতের মুখ সিপি রাধাকৃষ্ণন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বিজেপি একদিকে সংসদে আক্রমণাত্মক মেজাজ থেকে সরে এসে ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্বে ভরসা করছে, অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতে নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করার কৌশলও সামনে আনছে।
ধনখড় থেকে রাধাকৃষ্ণন: দুই ভিন্ন শৈলী
২০২২ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় জাট সমাজকে রাজনৈতিক কাঠামোয় জায়গা দেওয়ার বার্তা হিসেবেই ধনখড়কে বেছে নিয়েছিল বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর বিতর্কিত ভূমিকা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সঙ্গে সংঘাতের অভিজ্ঞতাই তাঁকে “তীব্র এনফোর্সার” রূপে পরিচিত করে তুলেছিল। চেয়ারম্যান পদে বসার পরও সেই ধারাই অব্যাহত ছিল— তীক্ষ্ণ আইনি তর্ক, ধারালো মন্তব্য, ও আক্রমণাত্মক হস্তক্ষেপে বিরোধীরা তাঁকে “সরকারের মুখপাত্র” বলে অভিযুক্ত করেছিল। এতে সংসদে ঐক্যমতের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অন্যদিকে রাধাকৃষ্ণন রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের মানুষ। কৈশোর থেকে আরএসএস ও জনসংঘের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি সংগঠনের ভেতরেই তৈরি। ফলে তাঁর আদর্শিক শিকড় বিজেপির ভেতরেই প্রোথিত। ব্যক্তিত্বে তিনি মৃদুভাষী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্ত স্বভাবের। এই বৈশিষ্ট্য সংসদের মতো বহুমতের আসরে সমঝোতা গড়ে তুলতে অনেক বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দক্ষিণ ভারতে বিজেপির কৌশল
কর্ণাটক ছাড়া দক্ষিণ ভারতে বিজেপির প্রভাব খুব সীমিত। তাই রাধাকৃষ্ণনের মতো একজন সর্বভারতীয় অথচ দক্ষিণমুখী নেতাকে চেয়ারম্যান করা নিছক সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা। সম্প্রতি তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেতুবন্ধন তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। আবার উদয়নিধি স্টালিনের সনাতন ধর্ম সংক্রান্ত মন্তব্যকে কঠোরভাবে নস্যাৎ করেছেন। তাঁর এই অবস্থান বিজেপির আদর্শিক লাইন মেনে দক্ষিণ ভারতে নতুন করে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা বলেই দেখা হচ্ছে।
ধনখড়ের পদত্যাগ ও অস্বস্তি
চলতি অধিবেশনের প্রথম দিনেই ধনখড় হঠাৎ পদত্যাগ করেন। প্রকাশ্যে তিনি স্বাস্থ্যজনিত কারণ দেখালেও রাজনৈতিক মহল বলছে, বিরোধীদের প্রস্তাব মেনে সরকারকে না জানিয়ে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। এনডিটিভির এক রিপোর্টে উঠে এসেছে, একাধিক ঘটনাপ্রবাহ বিজেপি নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়ায়, যার ফলেই ধনখড়কে সরে যেতে হয়। যদিও তিনি বারবার শাসক দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন।
নতুন ভারসাম্যের বার্তা
ধনখড়ের আক্রমণাত্মকতা সংসদে স্থবিরতা বাড়িয়েছিল। তাই বিজেপি এবার স্পষ্ট বার্তা দিল— রাজ্যসভা প্রয়োজন সমঝোতা ও শান্ত নেতৃত্বের। রাধাকৃষ্ণনের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আদর্শিকভাবে প্রোথিত ভূমিকা সংসদের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জগদীপ ধনখড়ের আক্রমণাত্মক ও আঞ্চলিক প্রতীকী রাজনীতির পরিবর্তে সিপি রাধাকৃষ্ণনের অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব এবং দক্ষিণমুখী কৌশল বিজেপির দীর্ঘমেয়াদি সম্প্রসারণ পরিকল্পনারই অংশ। সংসদে ভারসাম্য রক্ষা এবং রাজনৈতিক বার্তা— দুই দিকেই এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ।
