আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার নির্বাচনের আগে জন সুরাজ পার্টির প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাচনী কৌশলবিদ-থেকে-রাজনীতিক প্রশান্ত কিশোর। সোমবার তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিজেপি-র চাপের কারণে তাঁর দলের তিন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিশোর জানান, এবিষয়ে তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাবেন।
প্রশান্ত কিশোর বলেন, “বিজেপি গত কয়েক বছরে এমন একটা ভাবমূর্তি তৈরি করেছে যে যে-ই জিতুক, শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করবে তারাই। যারা জন সুরাজকে ভোট কাটার দল বলে অপমান করেছিল, আজ তারাই ভয় পেয়েছে। ভোট প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আর NDA আতঙ্কিত।”
তিনি আরও বলেন, “তারা মহাগঠবন্ধনকে নয়, জন সুরাজকেই ভয় পাচ্ছে। মানুষকে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে, ‘আমাদের ভোট না দিলে লালু যাদবের জঙ্গল রাজ ফিরে আসবে।’ কিন্তু এবার মানুষ তৃতীয় বিকল্প পেয়েছে—জন সুরাজ। গত ৩০ বছরের দাসত্ব থেকে মুক্তির পথ এই দল।”
কিশোর অভিযোগ করেন, তিনজন জন সুরাজ প্রার্থী—মুতুর শাহ (দানাপুর), সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি (ব্রহ্মপুর) ও শশী শেখর সিনহা (গোপালগঞ্জ)—বিজেপির চাপে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
দানাপুরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওখানে মহাগঠবন্ধনের প্রার্থী এক ‘বাহুবলী’। বিজেপি মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে—‘আমাদের ভোট না দিলে ও তোমাদের জীবন দুর্বিষহ করবে।’ কিন্তু এবার দানাপুরের মানুষ ভয় না পেয়ে ভোট দিতে প্রস্তুত।”
আরও পড়ুন: সোনা-রুপো কেনার সেরা সময় কোনটি, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
তিনি জানান, মুতুর শাহ জন সুরাজের প্রতীক নিয়েছিলেন কিন্তু নির্বাচন অফিসে পৌঁছাননি। “বিজেপি বলছে আরজেডি প্রার্থী রিতলাল যাদব তাঁকে অপহরণ করেছে। কিন্তু দেখুন—এই ছবিতে মুতুর শাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে!” কিশোর প্রশ্ন তোলেন, “একজন সাধারণ ব্যবসায়ী রাজনীতিতে নামলে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে ডাকলে তার বিকল্প কী?”
ব্রহ্মপুরে জন সুরাজের প্রার্থী সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি মাত্র তিন দিন প্রচার চালিয়েছিলেন। কিশোর বলেন, “গতকালই তিনি মনোনয়ন তুলে নেন। তার পরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে—তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের পাশে। এটা কি গণতন্ত্র নয়, ভোট প্রক্রিয়ার হত্যা?”
গোপালগঞ্জে প্রার্থী শশী শেখর সিনহা নিয়ে কিশোর বলেন, “তিনি আমাদের বৈঠকে নিয়মিত আসতেন। পরশু রাত আটটা পর্যন্ত প্রচার করেছেন। রাত ১১টার পর বিজেপি এমএলসি ও অন্য নেতারা তাঁকে দেখা করে মনোনয়ন তুলতে বাধ্য করেন।” তিনিও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সিনহার ছবি দেখান।
কিশোর ঘোষণা করেন, “জন সুরাজের ২৪০ যোদ্ধা এখনও ময়দানে আছে। তারা থামবে না, NDA-কে উপড়ে ফেলবে। ১৪ নভেম্বর গণনার দিন সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। যতই প্রার্থী কিনে নিন, ভয় দেখান বা বন্দি করুন—আমরা পিছিয়ে যাব না।”
তিনি বলেন, “NDA মহাগঠবন্ধনকে ভয় পায় না, কারণ তারা জানে সেখানে অনেক বাহুবলী ও বালি মাফিয়া আছে। কিন্তু তারা ভয় পায় ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মীদের—যাদের আমরা প্রার্থী করেছি।”
বলিউড সংলাপ ঘুরিয়ে কিশোর বলেন, “‘ঠাপ্পড় সে দর নহি লাগতা, পেয়ার সে লাগতা হ্যায়’। এদের গুণ্ডাদের ভয় নেই, ভালো মানুষদের ভয় আছে। জন সুরাজের প্রার্থীরা রাজনীতিবিদ নন, সাধারণ নাগরিক। তাঁদের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন তুলতে বাধ্য করা হচ্ছে।”
শেষে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি প্রার্থীরা নিরাপদ না থাকেন, তবে ভোটাররা কীভাবে নিরাপদ থাকবে?” কিশোর নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করে বলেন, “জন সুরাজ পিছু হটবে না। বিহার বদলাবে।”
