আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির ঐতিহাসিক রেড ফোর্ট এলাকায় ভয়াবহ গাড়িবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির দাবি করেছে। সংস্থা নিশ্চিত করেছে, বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল একটি গাড়িচালিত ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED) ব্যবহার করে, যা চালাচ্ছিল আত্মঘাতী হামলাকারী উমর উন নবি। হামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন নিহত এবং ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

NIA জানিয়েছে, ঘটনাটির মাস্টারমাইন্ডের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী আমির রশিদ আলি—জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বুরা, পাম্পোরের বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, হামলায় ব্যবহৃত গাড়িটি আমিরের নামেই রেজিস্টার্ড ছিল। তিনি নিজের নামে গাড়িটি কিনে দিল্লিতে গিয়ে উমরের সঙ্গে দেখা করেন ও গাড়িটির ব্যবহারের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পরে একই গাড়িতেই তৈরি করা হয় শক্তিশালী গাড়িবোমা।

ফরেনসিক পরীক্ষায় বিস্ফোরণে ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহাবশেষের ডিএনএ মিলিয়ে আত্মঘাতী ড্রাইভার হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে ড. উমর উন নবিকে। তিনি ফারিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা।
NIA ইতোমধ্যে তাঁর আরেকটি ব্যক্তিগত গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে, যা বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম বা রাসায়নিক প্রমাণের জন্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তের অংশ হিসেবে গত কয়েক দিনে হরিয়ানার নুহ এলাকা থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছিল—ড. রেহান, ড. মোহাম্মদ, ড. মুস্তাকিম এবং সার বিক্রেতা দিনেশ সিংলাকে। এঁরা সকলেই উমরের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন এবং কেউ কেউ আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তবে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের পর NIA জানিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনও  প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই রবিবার তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সার বিক্রেতার ক্ষেত্রে বিস্ফোরকের রাসায়নিক সংগ্রহের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হয়েছিল।

এখন পর্যন্ত ৭৩ জন সাক্ষীর বয়ান নিয়েছে NIA, যার মধ্যে রয়েছে আহত ব্যক্তিরাও। তদন্তে সমন্বয় করছে দিল্লি পুলিশ, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, হরিয়ানা পুলিশ, উত্তরপ্রদেশ পুলিশসহ একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা। বিস্ফোরণের বিস্তৃত পরিকল্পনা ও অর্থ যোগান চক্র খুঁজে বের করতে বহু অঙ্গরাজ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে।

রবিবার রাতে নুহের হায়াত কলোনি থেকে আরও দুই জন—রিজওয়ান এবং শোয়েবকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মতে, এঁরা সম্ভাব্য অর্থ যোগানের চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে সন্দেহ, তাঁরা উমর উন নবি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ড. মুজাম্মিল এবং ড. শাহীনকে নানাভাবে সাহায্য করতেন।

এই গ্রেপ্তারের ফলে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির একাংশ দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহজনক কার্যকলাপের আড়াল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি, যোগাযোগ রক্ষা এবং অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়-সংযুক্ত কয়েকজন শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

তদন্তকারীরা মনে করছেন, উমর উন নবি কোনও একক ব্যক্তির নির্দেশে নয়, বরং একটি বড় সংগঠিত নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে হামলাটি ঘটিয়েছে। বিস্ফোরকে ব্যবহৃত রাসায়নিক, অর্থের উৎস, দিল্লিতে গাড়ি কেনা থেকে বিস্ফোরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে একাধিক ব্যক্তি যুক্ত ছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

NIA জানিয়েছে, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং আরও বহু গ্রেপ্তার ও তথ্য সামনে আসতে পারে। দিল্লির অন্যতম নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় এমন আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা দেশে সন্ত্রাস প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতি বড় প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এখন এই নেটওয়ার্কের মূল শেকড় খুঁজে বের করতে দিনরাত অভিযান চালাচ্ছে।