আজকাল ওয়েবডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীর হোম ডিপার্টমেন্ট বুধবার রাজ্যে মোট ২৫টি বইকে “বাজেয়াপ্ত” ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের প্রখ্যাত সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ এ.জি. নূরানি, বুকার পুরস্কারজয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায়, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুমন্ত্র বোস ও ইতিহাসবিদ আয়েশা জলালসহ একাধিক বিশিষ্ট লেখকের বই। প্রশাসনের দাবি, এই বইগুলিতে “মিথ্যা বিবরণ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারা” প্রচার করা হয়েছে, যা যুবসমাজকে প্ররোচিত করে সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
আইনগত ভিত্তি
লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা-র অধীনস্থ হোম ডিপার্টমেন্ট ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (Bharatiya Nagarik Suraksha Sanhita) ২০২৩-এর ধারা ৯৮ অনুযায়ী বইগুলোকে “বাজেয়াপ্ত” ঘোষণা করেছে। এছাড়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita) ২০২৩-এর ধারা ১৫২, ১৯৬ ও ১৯৭-এ উল্লিখিত অপরাধের আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তদন্ত ও বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া প্রমাণ দেখিয়েছে—এই বইগুলির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে ‘মিথ্যা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বয়ান’ প্রচার হচ্ছে, যা প্রায়ই ইতিহাস বা রাজনীতির বিশ্লেষণ হিসেবে ছদ্মবেশে প্রকাশিত হচ্ছে। এতে তরুণদের মনে ‘অভিযোগবোধ, ভিকটিমহুড ও সন্ত্রাসী-নায়কত্বর’ সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে ভারী বৃষ্টিতে দেওয়াল ধসে নিহত বেড়ে ৭
নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় যাঁরা
নিষিদ্ধ বইগুলির মধ্যে রয়েছে—
এ.জি. নূরানি-র The Kashmir Dispute 1947–2012
সুমন্ত্র বোস-এর Kashmir at the Crossroads ও Contested Lands
আয়েশা জলাল ও সুগত বোস-এর Kashmir and the Future of South Asia
অরুন্ধতী রায়-এর Azadi এবং তাঁর সহলিখিত আরেকটি বই
ভিক্টোরিয়া স্কোফিল্ড-এর Kashmir in Conflict – India, Pakistan and the Unending War
ক্রিস্টোফার স্নেডেন-এর Independent Kashmir
অনুরাধা ভাসিন-এর The Dismantled State: The Untold Story of Kashmir after 370
স্টিফেন পি. কোহেন সম্পাদিত Confronting Terrorism
ইসলামি চিন্তাবিদ ইমাম হাসান আল-বানা ও মাওলানা মওদূদী-র দুটি গ্রন্থ। এছাড়াও ড. আফাক আজিজের শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-র জীবনী Tarikh-i-Siyasat Kashmir তালিকায় রয়েছে।
 
 বইয়ের দোকানে অভিযান
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরই শ্রীনগরসহ কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের তল্লাশি শুরু হয়। শ্রীনগরের একাধিক বুকস্টোরে পুলিশ বইয়ের তাক ঘেঁটে নিষিদ্ধ প্রকাশনা খুঁজে বের করে জব্দ করে। এমনকি চলতি সপ্তাহে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের উদ্বোধন করা নয় দিনের চিনার বুক ফেস্টিভ্যাল-এও হানা দেয় পুলিশ। প্রায় ২০০ স্টলে তল্লাশি চালিয়ে নিষিদ্ধ বই পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। শ্রীনগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—“বিচ্ছিন্নতাবাদী বয়ান প্রচার করে বা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে এমন কোনও সাহিত্য প্রচার রোধ করাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।”
নিষিদ্ধ হওয়া লেখকদের অনেকে ইতিমধ্যেই প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। সাংবাদিক অনুরাধা ভাসিন বলেছেন—“সরকার প্রমাণ করুক, আমার বইয়ের একটি লাইনও সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়।” রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলে এই সিদ্ধান্তকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বড় আঘাত বলে দেখা হচ্ছে।প্রশাসনের মতে, এই বইগুলো ইতিহাস বিকৃত করে, সন্ত্রাসীদের গৌরবময়ভাবে উপস্থাপন করে, নিরাপত্তা বাহিনীকে কালিমালিপ্ত করে এবং ধর্মীয় উগ্রবাদকে উৎসাহিত করে। ফলে কাশ্মীরের তরুণদের মনে বিচ্ছিন্নতার বীজ বপন হয় এবং সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর প্রকাশনা জগৎ ও মানবাধিকার মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে—এটি কি নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, নাকি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিসর সংকুচিত করার নতুন নজির?
