জাপানের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেত্রী সানাই তাকাইচি দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে পুরুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পূর্ব এশীয় দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক পরিবর্তনের সূচনা। জাপানের সংসদের উভয় কক্ষই তাঁর পক্ষে ভোট দিয়েছে।
2
10
লোয়ার হাউজে ২৩৭ ভোট পেয়েছেন ৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি। ম্যাজিক ফিগার ২৩৩। আর আপার হাউজে পেয়েছেন ১২৫ ভোট। ম্যাজিক ফিগারের থেকে একটি ভোট কম। তাতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকাচ্ছে না তাঁর।
3
10
কট্টর রক্ষণশীল মানসিকতা, জাতীয়তাবাদী আদর্শের তাকাইচির রাজনীতিতে অনুপ্রেরণা প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। রাজনীতিক নানা ঝড় পেরিয়ে তিনি এলডিপি-র নেত্রী হন এরপরেই দেশের শীর্ষে বসতে চলেছেন। গত ৪ অক্টোবর তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তাকাইচি।
4
10
প্রাক্তন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকাইচি দীর্ঘদিন ধরে থ্যাচারকে তার রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ২০১৩ সালে একটি সম্মেলনে তিনি প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। থ্যাচারের মতো, তাকাইচিও সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। তাঁর বাবা একটি গাড়ি সংস্থায় কাজ করতেন। মা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের মতে, রাজনৈতিক পরিবারবাদের সমাহারে এলডিপিতে তাঁর উদয় অস্বাভাবিক ছিল।
5
10
কোবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে স্নাতক অর্জন করে মার্কিন কংগ্রেসে কংগ্রেসনাল ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যা তাঁর শাসনব্যবস্থার বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গিকে রূপ দেয়। তিনি ১৯৯৩ সালে স্বাধীনভাবে জাপানের সংসদে প্রবেশ করেন এবং তিন বছর পর এলডিপিতে যোগ দেন।
6
10
সে দেশের নানা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাকাইচি বরাবরই হেভি মেটাল গানের ভক্ত। কলেজে পড়ার সময় ড্রাম বাজাতে শুরু করেন। আয়রন মেডেন এবং ডিপ পার্পল-এর মতো ব্যান্ডের ভক্ত তিনি। এতটাই ভক্ত ছিলেন যে সবসময় ব্যাগে চারটি ড্রাম বাজানোর কাঠি সঙ্গে রেখে দিতেন।
7
10
তবে তাকাইচির রাজস্ব ব্যয়ের মনোভাব থ্যাচারের ঠিক বিপরীত। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র অর্থনৈতিক নীতির কট্টর সমর্থক তিনি। তাকাইচি উচ্চ সরকারি ব্যয়, কর হ্রাস এবং জাপান ব্যাঙ্কের উপর আরও নিয়ন্ত্রণের পরিপন্থী। তবে তাঁর ব্যয়ের মনোভাবের ফলে জাপানের ঋণের বোঝা আর বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের।
8
10
প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী পেলেও খুশি নন জাপানের মহিলা জনসংখ্যার একটা বড় অংশ। তাকাইচি সমকামী বিবাহ এবং বিবাহিত দম্পতিদের পৃথক পদবি ব্যবহারের অধিকারের বিরোধী। উভয়ই বিষয়ই জাপানে ব্যাপক প্রচলিত। যদিও তিনি তাঁর মন্ত্রিসভায় আরও বেশি নারী নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সমীক্ষা অনুযায়ী, তাঁর মতামত মহিলাদের তুলনায় পুরুষ ভোটারদের কাছে বেশি জোরালোভাবে প্রতিফলিত হয়।
9
10
তাঁর রক্ষণশীল মানসিকতা, জাতীয়তাবাদী আদর্শের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মেরুকরণের অভিযোগও রয়েছে। টোকিওর ইয়াসুকুনি মন্দিরে ঘন ঘন যান তিনি। এই মন্দিরে জাপানের যুদ্ধে নিহতদের পাশাপাশি দোষী সাব্যস্ত যুদ্ধাপরাধীদেরও সম্মানিত করা হয়। এই কারণে তিনি চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সমালোচনার শিকার হয়েছেন। তিনি জাপানের শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর পাশাপাশি, তাইওয়ানের সঙ্গে নিরাপত্তা জোট বাঁধার পরিকল্পনাও করছেন। এই পদক্ষেপের ফলে বেজিংয়ের সঙ্গে আরও সম্পর্ক খারাপ হতে পারে জাপানের।
10
10
তিনি প্রমাণ করছেন যে একজন মহিলা জাপানি রাজনীতির শীর্ষে ক্ষমতা দখল করতে পারেন। আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তাকাইচির সামনে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে জাপানকে পরিচালনা করার কঠিন কাজ রয়েছে।