সংবাদ সংস্থা মুম্বই: ১৫ বছর আগে ব্যক্তিগত এক রসনাতৃপ্তি পদের কথা কবুল করেছিলেন রণবীর কাপুর। বর্তমানে তাঁর সেই বক্তব্য ফিরে এসে যেন তাঁর ভাগ্যে ঝড় বইয়ে দিয়েছে। 'রকস্টার' ছবির প্রচারের সময় এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছিলেন— “গোমাংস খেতে ভালবাসি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা তো পেশাওয়ার অঞ্চলের ছিলেন। তাই সেই সংস্কৃতির কিছু খাবার তো আমাদের পরিবারের রক্তে।”
আজ এত বছর পরেই এই মন্তব্য আজও পিছু ছাড়ছে না রণবীরের, বিশেষ করে যখন তিনি অভিনয় করছেন নীতেশ তিওয়ারি পরিচালিত রামায়ণ ছবিতে রামের চরিত্রে।সম্প্রতি, এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ এক ব্যক্তি রণবীর কাপুরের রামের চরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পোস্ট করেন একটি ছবি, যেখানে তিনি রয়েছেন সীতা রূপে সাই পল্লবীর পাশে। টুইটে লেখা হয়—“একজন গোমাংস ভক্ষক এখন পর্দায় শ্রী রামচন্দ্রের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। বাহ্! বলিউডের মাথা-টাথা কি খারাপ হয়ে গিয়েছে?”
সেই বিতর্কে যেন এক পলকে আগুন লাগে। অনেকেই রণবীরকে নিয়ে ট্রোল করা শুরু করেন, প্রশ্ন তোলেন তাঁর যোগ্যতা নিয়ে। এবার রণবীরের পাশে দাঁড়ালেন গায়িকা গায়িকা চিন্ময়ী শ্রীপদা। খুললেন মুখ — তবে একটু নয়!
রণবীর-গোমাংস খাদক বিতর্কের ওই পোস্টের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় গায়িকা লেখেন— “একজন বাবাজি, যিনি ঈশ্বরের নাম করে ধর্ষক হয়েও ভোটের সময় প্যারোলে বেরিয়ে পড়েন, সেটা কিছু না... কিন্তু কেউ কী খায়, সেটাই এখন বিরাট বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে!” আর একজন ট্রোলার লিখেছিলেন— “একটা খারাপ জিনিস আরেকটা খারাপ জিনিসকে জাস্টিফাই করে না।” তাতে চিন্ময়ীর সপাট উত্তর— “বাহ্! খুব ভাল। কেউ একজন সিনেমায় একটি চরিত্রে অভিনয় করল, সেটা নাকি ঠিক সমান খারাপ—যতটা খারাপ একজন ধর্ষক ভোট চাইতে আসছে আপনার এলাকায়! তাহলে তো আপনার প্রাপ্য রাম রহিমকেই সাংসদ করে ঘরে নিয়ে আসা।”

প্রসঙ্গত, ২০২৬ ও ২০২৭-এ মুক্তি পেতে চলা ‘রামায়ণ’-এ রণবীর থাকছেন রাম, সাই পল্লবী সীতা, যশ রাবণ, সানি দেওল হনুমান ও রবি দুবে লক্ষ্মণ চরিত্রে। ছবিটিতে সুর দিয়েছেন হ্যানস জিমার এবং এ আর রহমান, আর প্রোডাকশন ডিজাইন করছেন ডিউন ও ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা-র মতো ছবি যাঁদের দায়িত্বে ছিল, সেই দল। কিন্তু ছবির ধর্মীয় আবহে রণবীরের এক পুরনো ‘আমিষ খাবার’ মন্তব্য নিয়ে গোটা বিতর্ক যেন উত্তাল করে তুলেছে সমাজমাধ্যম।
প্রশ্ন উঠছে—অভিনেতার জীবন কি তার চরিত্রের ওপরে প্রভাব ফেলবে? চিন্ময়ী-র কথায় স্পষ্টই ফুটে উঠছে ভারতীয় সমাজের এক গভীর দ্বিচারিতা – একজন অভিনেতা যদি পুরনো জীবনে বিফ খেয়ে থাকেন, তবে কি তিনি ‘রামের’ চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন না? অন্যদিকে, একাধিক বাবাজি ধর্ষণ, ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগেও ভোটে দাঁড়িয়ে সমাজের ‘পবিত্রতা’ বজায় রাখছেন—তা কি নীরবে মেনে নেওয়া যায়?
রণবীরের ‘রামায়ণ’ এখনও মুক্তি পায়নি, অথচ বিতর্ক যেন ছবির আগেই ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের প্রতিটি কোণায়। একদিকে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে তারকার ব্যক্তিগত জীবন।
