দীর্ঘদিন ধরে বলিউডে ‘খান’ মানেই বক্স অফিসের সমার্থক। শাহরুখ খান, সলমন খান ও আমির খান-এই তিন নামেই কয়েক দশক ধরে ঘোরে হিন্দি ছবির দুনিয়া। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। নীরবে আলোচনার বাইরে থেকে বক্স অফিস আয়ের নিরিখে এই তিন সুপারস্টারকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান।
প্রায় ২৫ বছরের অভিনয় জীবনে ইরফান খানের ভারতীয় ছবির মোট বক্স অফিস আয় ছিল আনুমানিক ২,০০০ কোটি টাকা। সংখ্যার হিসেবে তা হয়তো অন্য খানদের মতো বিশাল নয়, কিন্তু এখানেই গল্পের শেষ নয়। আসল চমক লুকিয়ে রয়েছে তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে। হলিউড ও বিদেশি প্রজেক্ট মিলিয়ে ইরফান খানের অভিনীত ছবিগুলোর বিশ্বব্যাপী আয় দাঁড়ায় প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২২,৫০০ কোটি টাকা।
এই অঙ্ক কতটা বড়, তা শাহরুখ, সলমন ও আমিরের সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যায়। বলিউডের এই তিন খানের ছবির একত্রিত বক্স অফিস আয় যেখানে প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকা, সেখানে একা ইরফান সেই সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ বাণিজ্যিক দিক থেকেও তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে সফল অভিনেতা।
‘লাইফ অব পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’, ‘দ্য অ্যামেজিং স্পাইডার-ম্যান’, ‘ইনফার্নো’-এর মতো আন্তর্জাতিক মেগা ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইরফান। এই ছবিগুলোই তাঁকে এনে দেয় বিশ্ব জুড়ে পরিচিতি এবং বিপুল সাফল্য। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, নায়কোচিত গ্ল্যামার ছাড়াও অভিনয়ের দক্ষতায় দর্শকের মন জয় করা সম্ভব।
রাজস্থানের জয়পুর থেকে যাত্রা শুরু করে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা, সেখান থেকে বলিউড এবং শেষ পর্যন্ত হলিউড-ইরফান খানের জীবন যেন এক নিখুঁত সিনেমার চিত্রনাট্য। কোনও অতিরিক্ত প্রচার, বিতর্ক নয়, শুধু কাজের মধ্য দিয়েই তিনি নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন।
২০২০ সালে ইরফান খানের অকালপ্রয়াণে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সিনেমা হারিয়েছে এক অনন্য শিল্পীকে। তবে তাঁর রেখে যাওয়া কাজ এবং এই অভাবনীয় বক্স অফিস রেকর্ড আজও প্রমাণ করে, তিনি শুধু একজন অভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন এমন এক নাম যিনি নিঃশব্দে বিশ্বসিনেমার ইতিহাসে নিজের অধ্যায় লিখে গিয়েছেন।
