সংবাদ সংস্থা মুম্বই: তিনি ছিলেন ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে এক বিস্ময়। তাঁর কণ্ঠে ছিল আবেগ, মজা, পাগলামি আর অপার মাধুর্য—তবু কিশোর কুমার নিজে কখনও মুম্বই বা বলিউডকে ‘নিজের’ বলে মনে করেননি। জীবনের এক অকপট সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, এই শহর তাঁর জন্য নয়। তিনি ফিরে যেতে চেয়েছিলেন খণ্ডবায়, তাঁর পৈতৃক ভিটেতে। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি—তার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর।

 

“এই বোকা, বন্ধুহীন শহরে কে বাঁচতে চায়? এখানে সবাই আপনাকে ঠকানোর জন্য মুখিয়ে থাকে। কাউকে কি ভরসা করা যায়? আমি এই অর্থহীন দৌড়ঝাঁপ থেকে বেরিয়ে খণ্ডবায় ফিরে যেতে চাই, আমার পিতৃপুরুষের মাটিতে। কে মরতে চায় এই কুৎসিত শহরে?”—এই কথাগুলো বলেছিলেন নিজে কিশোর কুমার এক সাক্ষাৎকারে।

 

যদিও কিশোর কুমার অসাধারণ সব হিট কমেডি ছবিতে অভিনয় করেছেন, বাস্তবে তিনি অভিনেতা হতে চাননি কখনও। তিনি জানান,“আমাকে প্রতারণা করে অভিনয়ের জগতে আনা হয়েছিল। আমি শুধু গাইতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাই আশোক কুমারের সুবাদে ছবির দুনিয়ায় নামতে হল। পরিচালকদের তো আমার দরকার শুধু বিক্রির জন্য, আদর বা সম্মান নয়।”

 

অভিনয় এড়াতে কত কিছুই না করতেন কিশোর! কোথাও হঠাৎ ইয়োডেলিং করে দিতেন, আবার কোথাও এক নায়িকাকে দেওয়া সংলাপ ভুল করে অন্য নায়িকাকে বলে দিতেন। এমনকী, নিজের মাথাও কামিয়ে ফেলেছিলেন একবার, যাতে কেউ ডাক না দেয় ছবিতে। “আমি তো অভিনয় থেকে পালাতে সব কিছু করেছিলাম। সংলাপ ভুল বলেছি, পাগলের মতো আচরণ করেছি, দাড়ি কেটে ফেলেছি, নাটকের মাঝখানে গান গাইতে শুরু করেছি—তবুও তারা আমাকে ছাড়েনি।”

 

মুম্বইতে আসার পিছনেও কোনও স্টারডমের লোভ ছিল না তাঁর। তিনি এসেছিলেন শুধু একটাই আশায়—ভাই আশোক কুমার তাঁকে তাঁর সঙ্গীত-দেবতা কেএল সায়গলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবেন। তবে ভাগ্য অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। জীবনের শেষদিকে ঠিক করেছিলেন, সবকিছু গুটিয়ে খণ্ডবায় ফিরে যাবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল হওয়ার আগেই ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর, আশোক কুমারের জন্মদিনে, হৃদরোগে প্রয়াত হন কিশোর কুমার। মুম্বইয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি—যে শহরটাকে তিনি কখনওই নিজের মনে করতে পারেননি।