আজকাল ওয়েবডেস্ক: নদিয়ার রানাঘাট থানার রায়নগর মাঠপাড়ার দুই যুবক পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে মহারাষ্ট্রে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার। এরপর গত সাত মাস ধরে তাঁরা সেখানকার জেলে বন্দি। পরিবারের অভিযোগ, কোনও সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁরা বাঙালি এবং মতুয়া বলেই পরিকল্পিতভাবে এই রোষের শিকার। এমনই অভিযোগ মাঠপাড়ার একাংশের।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই ভাই, নয়ন বিশ্বাস (২০) ও মণিশঙ্কর বিশ্বাস (২২), ২০২৪-এর নভেম্বর মাসে কাজের খোঁজে পাড়ি দেন মহারাষ্ট্রে। কিন্তু সেই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হঠাৎ তাঁদের গ্রেপ্তার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ। পরিবারের লোকজন প্রথমে কিছুই জানতে পারেননি। পরে এক প্রতিবেশীর মারফত এই খবর শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বাবা-মা, নিশিকান্ত বিশ্বাস ও পুষ্প বিশ্বাস।
নিশিকান্তবাবুর কথায়, 'আমরা গরিব মানুষ। ছেলেরা কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিল। এখন মহারাষ্ট্রে জেলে আটকে রয়েছে। কীভাবে তাদের ছাড়ানো যাবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।' স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারটি আর্থিকভাবে যথেষ্টই পিছিয়ে। দিনমজুরের কাজ করেই কোনওরকমে দিন চলে তাঁদের। আশা ছিল, সন্তানরা কাজ শুরু করলে সমস্যা মিটে গিয়ে সুদিনের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু উল্টে তাঁরা পড়েছেন সমস্যায়। এই অবস্থায় আইনি লড়াই চালানো কিংবা ছেলেদের খোঁজে মহারাষ্ট্র যাওয়া তাঁদের কাছে কার্যত অসম্ভব। কারণ আর্থিক টানাটানি।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর একবার মণিশঙ্করকে নিয়ে মহারাষ্ট্র পুলিশের একটি দল তাঁদের রায়নগরের বাড়িতে তদন্তে আসে। তারা পরিবারের থেকে বেশ কিছু পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে ফের ফিরে যায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপর আর কোনও খবর মেলেনি। অভিযোগ, মহারাষ্ট্র পুলিশের তরফ থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: দেশভাগ আটকাতে দুই নেতা বৈঠক করেছিলেন বাথরুমে, বাংলাদেশ তৈরির আগে কী কী ঘটেছিল পাকিস্তানে?
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, 'ওঁরা মতুয়া বলেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিরপরাধ ছেলেদের অকারণে ফাঁসানো হচ্ছে। কাজের সন্ধানে গিয়ে তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন।' প্রশাসনের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দুই যুবকের মুক্তির দাবিতে স্থানীয়ভাবে আন্দোলনের প্রস্তুতিও চলছে। প্রশাসনের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। গোটা বিষয়টি নিয়ে মতুয়া মহা সংঘের অন্যতম আহ্বায়ক এবং লিগাল সেলের চেয়ারম্যান মুকুল বিশ্বাস বলেন, 'দেশজুড়ে যেভাবে বাঙালি বা পিছিয়ে পড়া মানুষ বা নমঃশূদ্র ও মতুয়াদের হেনস্থা করা হচ্ছে আমরা তার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি এবং কীভাবে পরিবারটিকে আইনি সহায়তা দেওয়া যায় সেই বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছি।'
প্রসঙ্গত, বুধবার বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেমন বিঁধেছিলেন কেন্দ্র সরকারকে। তেমনই মনে করিয়ে দেন, দেশ জুড়ে অকারণে বাঙালিদের উপর এই অত্যাচার মেনে নেবেন না তিনি। বক্তব্যে মমতা সাফ জানিয়েছিলেন, কোন পন্থায়, কীভাবে বাংলাকে হেনস্থা করার পরিকল্পনা করছে গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রের কেন এত বাংলা বিদ্বেষ, কেন খুঁজে খুঁজে বারবার অপদস্থ করা হচ্ছে তাঁদের? সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন মমতা।
