আজকাল ওয়েবডেস্ক: চলতি এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিরুদ্ধে নামতে চলেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। তবে আমিরশাহির এই ক্রিকেটারের কাছে ম্যাচটি শুধুমাত্র টুর্নামেন্টের একটা বড় ম্যাচ নয়। বরং বলা যায় নিজের শিকড়ে ফেরার মুহূর্ত। এই ম্যাচটিকে অনেকটা সেভাবেই দেখছেন সিমরনজিত সিং। এককালে লুধিয়ানার বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সি বাঁ-হাতি স্পিনার স্পষ্ট মনে করতে পারেন এক দশকেরও বেশি আগে তিনি মোহালির পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাকাডেমির নেটে ছোট্ট শুভমান গিলকে বল করার স্মৃতি। সিমরনজিত সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘শুভমানকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। যদিও ওর আমাকে মনে আছে কিনা সেটা আমি জানি না। এটা ছিল ২০১১-১২ সালের কথা। ওর বয়স তখন ১১-১২ বছর হবে। আমরা ভোর ছ’টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত অনুশীলন করতাম। শুভমন ওর বাবার সঙ্গে ঠিক তখনই আসত। আমি প্রায়ই অতিরিক্ত বল করার জন্য থেকে যেতাম, তখনই ওকে অনেক বল করেছি’।
জীবন এরপর সিমরনজিতকে অন্য পথে নিয়ে যায়। নিয়মিত জেলা ক্রিকেট খেললেও রঞ্জি ট্রফির সম্ভাব্য দলে জায়গা পাওয়া পর্যন্তই থেমে যায় তাঁর যাত্রা। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের নেট বোলার হিসেবেও সুযোগ মিলেছিল, কিন্তু বড় মঞ্চে সাফল্য আসেনি। এরপর এল কোভিড-১৯ মহামারি। সিমরনজিত জানান, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে আমি ২০ দিনের প্র্যাকটিসে দুবাইয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে আর ফেরা হয়নি। তখন থেকেই থেকে যাই। জুনিয়রদের কোচিং আর ক্লাব ক্রিকেট খেলে টিকে থাকতাম। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির হয়ে খেলার যোগ্যতা পেতে প্রয়োজনীয় তিন মরশুম পার করার পর তিনি যোগাযোগ করেন জাতীয় দলের কোচ লালচাঁদ রাজপুতের সঙ্গে।
রাজপুত তাঁকে ‘কৌশলী’ বোলার আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে সব বাঁ-হাতি স্পিনারের সাহস থাকে না বলকে বাতাসে ভাসিয়ে উইকেট তুলে নেওয়ার। সিমরন সেটা জানে’। পরিসংখ্যান বলছে, ‘এখনও পর্যন্ত ১২ টি-টোয়েন্টিতে সিমরনজিত নিয়েছেন ১৫ উইকেট, ইকোনমি রেট ৬-এর নিচে। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁর বোলিং ফিগার ছিল ১/২৪, যেখানে তিনি ১১টি ডট বল করেছিলেন’। সিমরনজিত জানালেন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি তাঁকে দিয়েছে নিজের ধর্ম নিয়ে চর্চার স্বাধীনতা। তিনি বলেন, ‘এই দেশটা দারুণ। আমার ধর্ম না ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কখনও কেউ প্রশ্ন তোলেনি’। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁর পরিবারের সমর্থন কার দিকে থাকবে? এই প্রশ্নে হেসে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল ভারতের হয়ে খেলা। কিন্তু এখন আমি আমিরশাহির জার্সি গায়ে খেলছি। তাই মনে হয় ওরা আমার দলকেই সমর্থন করবে’।
নজরকাড়া লড়াই ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে ভারত বনাম পাকিস্তান। দুই দলই সুপার ফোরে পৌঁছাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে টুর্নামেন্টে আরও একবার দেখা মিলতে পারে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের। গ্রুপ পর্বে ভারত আরও খেলবে ওমানের বিরুদ্ধে, যারা চমক দেখাতে মুখিয়ে রয়েছে। গ্রুপ বি-ও সমান জমজমাট। শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশে প্রতিশোধের লড়াই, আফগানিস্তানের আগুনে ব্যাটিং বনাম হংকংয়ের নির্ভীক মনোভাব—সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তায় ভরা। এশিয়া কাপ একদিকে আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির মঞ্চ আবার অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের উত্থানের মঞ্চ।ভারতের জন্য এই আসর হতে পারে সেই জায়গা, যেখানে আগামী প্রজন্ম নিজেদের নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করবে। এশিয়া কাপ সরাসরি সম্প্রচার করবে সোনি টেন স্পোর্টস। অনলাইনে ম্যাচ দেখা যাবে সোনি লিভের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে।
