আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার অ্যাডিলেডে নিজের ঘরের মাঠের সঙ্গে ভালবাসার ভিত আরও মজবুত করলেন ট্র্যাভিস হেড।
ঘরের মাঠে স্মরণীয় এক শতরান করে দর্শকদের উচ্ছ্বসিত করলেন অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটার। একই সঙ্গে কার্যত ধ্বংস করে দিলেন ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ জয়ের স্বপ্ন।
তৃতীয় টেস্টে ম্যাচের আবহ শুরু থেকেই ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। প্রথম ইনিংসে ডিআরএস প্রযুক্তি নিয়ে তীব্র বিতর্কের মধ্যেই অ্যালেক্স ক্যারির আবেগঘন শতরান অস্ট্রেলিয়াকে নতুন করে বিশ্বাস এনে দেয়।
সেই বিশ্বাসে ভর করে দ্বিতীয় ইনিংসে মারকুটে শতরান করেন ট্র্যাভিস হেড। তাঁকে ওপেনে নামানো যে চলতি অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বড় স্ট্র্যাটেজি তা আরও একবার প্রমাণিত হল।
ইনিংসের শুরুতে সংযত ছিলেন হেড, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। নাটকীয় মুহূর্ত আসে যখন তিনি ৯৯ রানে।
অফ স্টাম্পের বাইরে জোফ্রা আর্চারের গুড লেংথ ডেলিভারিতে হেড কাট শট মারেন। বল দ্রুত গালির দিকে উড়ে যায়। হ্যারি ব্রুক দু’হাতে ধরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মুহূর্তের ভুলে সুযোগ হাতছাড়া হয়।
কয়েক সেকেন্ডের জন্য পুরো স্টেডিয়াম নিঃশ্বাস আটকে রেখেছিল। এরপর ক্যাচ পড়ে যেতেই হতাশায় মাথা নিচু করেন আর্চার। অন্যদিকে, হেডের মুখে ধরা পড়ে প্রশস্ত হাসি।
বিশেষ এক মাইলফলকের ঠিক আগে যে তিনি জীবন পেয়ে গেছেন, তা তিনি ভালোই বুঝেছিলেন। পরের বলেই জোরালো শটে শতরান পূর্ণ করেন হেড, আর অ্যাডিলেডে শুরু হয় উল্লাস।
এই মাঠে ট্র্যাভিস হেডের রেকর্ড ঈর্ষণীয়। অ্যাডিলেডে ন’টি টেস্টে তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচটি শতরান ও দুটি অর্ধশতরান করেছেন। একই মাঠে টানা চারটি টেস্টে শতরান করা দ্বিতীয় ব্যাটারও তিনি।
এই ধারাবাহিকতার শুরু ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, যেখানে তিনি করেন ১৭৫ ও অপরাজিত ৩৮ রান। এরপর আসে ১১৯ ও ১৪০, আর এবার যোগ হল আরও একটি অপরাজিত শতরান।
অ্যাডিলেড ওভালে এর আগে এমন কীর্তি গড়েছিলেন শুধু মাইকেল ক্লার্ক। শতরানের উদযাপন ছিল আবেগে ভরা ও ব্যক্তিগত। এক হাতে ব্যাট, অন্য হাতে হেলমেট তুলে ধরে গ্যালারির দিকে তাকিয়ে স্যালুট দেন হেড।
এরপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে অ্যাডিলেডের ঘাসে হাঁটু গেড়ে চুমু খান। গ্যালারিতে থাকা তাঁর স্ত্রী তখন আনন্দে উজ্জ্বল, আর পুরো স্টেডিয়াম সেই মুহূর্তে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে।
বড় মঞ্চে পারফর্মার হিসেবে ট্র্যাভিস হেড ইতিমধ্যেই নিজের পরিচয় গড়েছেন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ও ক্রিকেট বিশ্বকাপে শতরান করার পর এবার অ্যাশেজেও এল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
হেডের কাছে অ্যাডিলেড শুধু একটি ভেন্যু নয়, এটা তাঁর ঘরের মাঠ। আর সেই ঘরেই তিনি আবারও প্রমাণ করলেন, কেন বড় ম্যাচে তাঁর ওপর অস্ট্রেলিয়া ভরসা রাখে।
