আজকাল ওয়েবডেস্ক: নীলচে আকাশ আর ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ বেশ জানান দিচ্ছে ঢাকে কাঠি পড়ল বলে। রাস্তাঘাটের ভিড়ই বলে দিচ্ছে, হাতে সময় কম, মানুষ প্রিয়জনের জন্যে উপহার কিনছে। পাড়ায় পাড়ায় মণ্ডপ বানানো শুরু হয়ে গিয়েছে।
উৎসবে আনন্দ করার পরিকল্পনাও করতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকে। কিন্তু মেহতাব হোসেনের মনে যে বিষাদের সুর। এবার তাঁর বাড়িতে হচ্ছে না দুর্গাপুজো। মেহতাব শব্দের অর্থ চাঁদ। বল পায়ে তিনি মাঠে ছড়িয়ে দিতেন চাঁদের স্নিগ্ধ আলো।
মেহতাব মানে লড়াই। দুই প্রধানের জার্সিতে সবুজ ঘাসে লড়াইয়ের ইতিকথা লিখে গিয়েছেন তিনি। সেই মেহতাবের বাড়িতে এবার মাতৃশক্তির আরাধনা হচ্ছে না। একসময়ের মাঝমাঠের ব্রিগেডিয়ার বলছেন, ''আমার বাবা প্রয়াত হয়েছেন। ছোট শ্যালক ক্যান্সারে আক্রান্ত। কী ভাবে হবে পুজো?''
আরও পড়ুন: মেসির নায়ক হওয়ার দিনে বাঙালি 'মেসি'র জন্য ভেসে এল সুখবর, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের মেয়ের ফুটবল-যাত্রা শুরু
স্ত্রী মৌমিতার ইচ্ছাতেই বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন মেহতাব। এই বছর ঢাকের বোল বাজবে না 'নির্মলা ম্যানসনে'। তাঁর একসময়ের সতীর্থরা পুজোর সময়ে বাড়িতে আসতেন। আনন্দে, আড্ডায় কেটে যেত দিনগুলো। কিন্তু এই বছর যে সুর কেটে গিয়েছে। ভারাক্রান্ত মন।
পুজোর স্বাদ-গন্ধ-বর্ণ মানুষকে করে তোলে নস্ট্যালজিক। আশ্বিনের শারদপ্রাতে মেহতাবও কি ভাসবেন না পুরনো স্মৃতিতে? ছোটবেলায় মেহতাবের কাছে পুজো মানেই ছিল নতুন জামা। আত্মীয় বন্ধুরা যেমন ইদে উপহার দিয়েছেন, তেমনই পুজোতেও নানা উপহার পেয়েছেন।
অপেক্ষা কাজ করত তাঁর মনে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই উৎসাহটা হয়তো তাঁর মনে রয়েছে কিন্তু অপেক্ষাটা আর নেই। খেলোয়াড় জীবনে পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারেননি। মেহতাব বলছেন, ''তখন সময় কোথায়?'' তখন তো মাঝমাঠের ব্রিগেডিয়ার ফুটবল-সাধনায় মগ্ন।
খেলার জন্য রাত করে ঠাকুর দেখেননি। তাঁর স্ত্রী মৌমিতাও অনেক ত্যাগ করেছেন স্বামীর জন্য। আইএসএল-এর জন্য মেহতাবকে কলকাতা ছেড়ে থাকতে হয়েছে। তখন তাঁর মন পড়ে থাকত এই শহরে।
এখন অবশ্য মেহতাব আর ফুটবলার নন। তিনি কোচ হয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় ভূমিকা। দুর্গার আসা যাওয়ার মাঝেই জীবন নৌকো কত দূর এগিয়ে এসেছে। একবার স্মৃতিচারণ করে মেহতাব বলেছিলেন, ''মনে পড়ে এক বার লেবুতলায় গিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে, হাতে পড়ে মাত্র দশ টাকা। সেই সম্বল করেই লেবুতলা থেকে হেঁটে হেঁটে ঢাকুরিয়া ফিরে চার বন্ধু মিলে টাকা ভাগাভাগি করে কোল্ডড্রিংকস খেয়েছি। এখন হয়তো এই সামান্য খরচ কোনও ব্যাপার নয়, তবে তখনের হিসেবে তাই ছিল মহার্ঘ্য।''
সেই স্বাদ এখনও লেগে রয়েছে। পুজো এলে সেই স্বাদগুলো নিশ্চয় এবারও পাবেন মেহতাব। সেই সঙ্গে হু হু করা এক অনুভূতিও তাঁর মনকে গ্রাস করবে। এ যেন এক মন কেমনের পুজো।
আরও পড়ুন: ভেনিজুয়েলা ম্যাচে নায়ক মেসি, ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে খেলবেন না মহানায়ক
