আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ ২১ জুলাই! একদিকে, তৃণমূলের শহিদ তর্পণের দিন। অন্যদিকে, ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষবার জোড়া-ফুলের শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ। ধর্মতালয় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে কী বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি, সেদিকেই নজর বঙ্গবাসীর।

'একুশে জুলাই' রাজ্য রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। কলকাতার ধর্মতলায় সকাল থেকেই জনজোয়ার। জেলা থেকে আসা হাজার হাজার বাসে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকে ছেয়ে গিয়েছে মহানগরীর রাস্তাঘাট। পায়ে হেঁটে শহরের প্রাণকেন্দ্রমুখী মানুষ। শনিবার রাত থেকেই দূরের জেলাগুলি থেকে  কলকাতায় এসে গিয়েছিলেনন অনেকে। সোমবার ভোর থেকে জেলা থেকে আসা তৃণমূল সমর্থকদের 'স্লোগানে' মুখরিত কল্লোলিনী কলকাতার পথঘাট।

প্রতিবছর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দলের আগামী দিনের লক্ষ্যপূরণের বার্তা দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। ২৬-এর নির্বাচনের আগে শেষ ২১ শে জুলাই কী বার্তা দেবেন দলনেত্রী? বিজেপি শাসিত রাজ্য়ে বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে অত্য়াচারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ইতিমধ্যেই গেরুয়া বিরোধী সুর বেঁধে দিয়েছেন মমতা। সেই রেশ আরও কতটা তীব্র হয় সেদিকেই এখন নজর। 

২১শের সভাস্থলে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোতায়েন প্রায় ৫০০০ পুলিশকর্মী। আশেপাশের বহুতলের ছাদ থেকে চলছে নজরদারি। গোটা এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে হাই সিকিউরিটি জোন হিসেবে। 

কী ঘটেছিল ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই?
মমতা ব্যানার্জি, তাঁর ডাকে তোলপাড় হত জাতীয়বাদীদের হৃদয়। উসকে উঠত কাস্তে-হাতুড়ির অবসানের স্বপ্ন। সেবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতার ডাকে মহাকরণ অভিযানের জন্য কলকাতার রাজপথে নেমেছিলেন কয়েক হাজার যুব কংগ্রেসকর্মী। তৎকালীন রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক সচিবালয়ে এই অভিযান রুখতে মরিয়া ছিল পুলিশও। 

২১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিযানের জন্য জমায়েত শুরু হয়। কলকাতার পাঁচটি জায়গা থেকে যাত্রা শুরু হয়।  এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। পুরোভাগে ছিলেন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা নিজে। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্ররা। মধ্য-কলকাতার ধর্মতলা, ডালহাউসি স্কোয়ার সংলগ্ন বিভিন্ন ক্রসিং-এ গড়া হয় ব্যারিকেড। মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। শুরু হয় ধুন্ধুমার। পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বেঁধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের। 

পুলিশি বাধা ঠেকাতে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সারা কলকাতা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশের ভ্যানে অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকে, পিছু হঠতে শুরু করে পুলিশ। এরপর আচমকা গুলি চালাতে শুরু করে মরিয়া পুলিশবাহিনী। আর তাতেই প্রাণ যায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। 

মৃত্যু হয়, বন্দনা দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল, কল্যান ব্যানার্জি, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ দাস, মহম্মদ খালেক, ইনু-র। পরবর্তীকালে কংগ্রেসিরা এই ১৩ জনকে 'শহিদ' নামে ডাকতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন- স্মরণ করলেন শহিদদের, তোপ দাগলেন বিরোধীদেরও, ধর্মতলায় মঞ্চ পরিদর্শনে গিয়ে মমতা বললেন, ‘বাকি কথা কাল হবে’

এই ১৩ যুব কংগ্রেসকর্মীর মৃত্যুতে রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। কার নির্দেশে গুলি চালাল পুলিশ, এই প্রশ্নের আজও মীমাংসা হয়নি। উল্লেখ্য, সেসময় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যদিও পরবর্তীকালে এ ঘটনায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ক্নিনচিট দিয়েছিল সিবিআই। কার নির্দেশে পুলিশ সেদিন গুলি চালিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।

১৯৯৩ সালের এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবছর এই দিনটিকে 'শহিদ দিবস' হিসেবে পালন করে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। পরবর্তীকালে ১৯৯৮ সালে মমতা ব্যানার্জি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেন। তখন থেকেই ২১ জুলাইকে 'শহিদ দিবসে'র মর্যাদা দেওয়া হয়। বর্তমানে তৃণমূলের 'শহিদ দিবস'ই যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।