আজকাল ওয়েবডেস্ক: সামনে নির্বাচন হোক কিংবা পুজো, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আবার প্রমাণ করলেন, ভোট আসবে, যাবে পাঁচ বছর পর পর, পুজো আসবে যাবে প্রতি বছরে কিন্তু বাংলা ভাষাভাষীদের উপর যে অত্যাচার চলছে, তাঁকে পীড়া দিচ্ছে তা। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ হোক কিংবা পুজোর অনুদান নিয়ে আলোচনা, কোনও জায়গাতেই তিনি বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের বিষয়টি থেকে বেরিয়ে কোনও একটি বিষয়ের উপর মনস্থির করে থাকতে পারছেন না। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান, অভিভাবক হিসেবে বারবার ভাবছেন সেইসব মানুষের কথা, যাঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বাইরের রাজ্যে গিয়ে বারে বারে অকারণ হেনস্থার মুখে পড়ছেন।
বৃহস্পতিবার, তাঁর বক্তব্যে সেই দিক আরও স্পষ্ট হল। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে শারদীয়া উৎসব উপলক্ষে প্রশাসনিক ও সমন্বয় বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে যেমন পুজোয় এবার সরকারের অনুদান ঘোষনা করলেন, পুজোর উদ্বোধনের বিসর্জনের কথা বললেন, তেমনই মনে করালেন, পুজোর, আনন্দের দিন এগিয়ে এলেও, যাঁরা ভিন রাজ্যে গিয়ে ক্রমাগত অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁদের নিয়েও ভাবনা রয়েছে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের।
আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য! ছিল ৮৫ হাজার, এ বার লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে পুজোর সরকারি সাহায্য কত? ঘোষণা মমতার
যে বক্তব্যের সূচনা, ‘ বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গা পুজো, মা আসছেন…’। সেই বক্তব্যই প্রয়োজনীয় কিছু কথা ধরে এগনোর পরেই, মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘পুজো সবার জন্যই ভাল হয়ে উঠুক, আনন্দে মেতে উঠুন সকলে, দেখলেন সবাই আজকে বাংলায় কত সুন্দর সুন্দর কথা বললেন। যাঁরা অত্যাচারিত হচ্ছেন, নীপিড়িত হচ্ছেন, জেলায় ফিরে আসছেন, দরকার হলে ক্লাবের পক্ষ থেকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাঁদের নতুন জামাকাপড় দেবেন। কারণ, তাঁদের সব কেড়ে নিচ্ছে এবং খুবই অত্যাচারিত হয়ে ফিরে আসছে।‘
একই সঙ্গে মমতা মনে করিয়ে দিতে ভুলে গেলেন না, ‘কিন্তু এই অত্যাচার আমরা পছন্দ করি না। আমরা কারও উপর করব না। কেউ খারাপ কাজ করেছে বলে, সেই খারাপ কাজটা যেন আমরা না করি। আমাদের সহনশীলতা, আমাদের ঐতিহ্য, এটা আমাদের সংস্কৃতি।‘ এর আগেও ১৬ জুলাই হোক বা ২১ জুলাই কিংবা বীরভূমের মঞ্চ, মমতার মুখে বারেবারে ভিন রাজ্যে বাঙালিদের অত্যাচারিত হওয়ার কথা উঠে এসেছে। একই সঙ্গে, তিনি বারে বারে মনে করিয়েছেন, অন্য কোনও ভাষার মানুষের উপর তাঁর কোনও রাগ নেই, ক্ষোভ নেই।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোরে মমতা ঘোষণা করলেন, ২০২৫ সালে দুর্গাপুজোর কমিটিগুলির জন্য এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেবে সরকার। গত বছরের অনুদান ছিল ৮৫ হাজার টাকা। এই বছর সেই অনুদান এক লাফে ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিলেন মমতা। এর পাশাপাশি বিদ্যুতের বিলেও ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবারেই দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে বৈঠকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে আগামী ৫ অক্টোবর রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হবে। ২, ৩ এবং ৪ অক্টোবর ঠাকুর বিসর্জনের দিনক্ষণও ঠিক করে দেন তিনি। এর পরে দুর্গাপুজো কমিটিগুলির উদ্দেশে বড় ঘোষণা করেন মমতা। ঘোষণা করেন, এবার বড় কমিটিগুলিকে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এই বড় ঘোষণা করার আগে তিনি বৈঠকে উপস্থিত সকল পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের হাসির ছলে জিজ্ঞেস করেন, এ বার কত? উত্তরে কেউ বলেন ৯০ হাজার, কেউ বা এক লক্ষ। সবাইকে চমকে দিয়ে তাঁর ঘোষণা এবারে অনুদান এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা।
